বগুড়া মেডিকেল কলেজছাত্রের মৃত্যুর বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ছয় দফা দাবিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা। রোববার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

ঝালমুড়ি বিক্রেতার ছেলের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকালে মারা যান বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরাজ হোসেন ওরফে ফাহিম (২৬)। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে ওই মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

আজ বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত মেডিকেল কলেজের ২ নম্বর ফটকের সামনে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি জানান ও মেহেরাজ হোসেনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শাকিল ব্যাপারীর (২৬) বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন।

মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো মেহেরাজ হোসেন হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রধান আসামি শাকিল ব্যাপারীর মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসের ২ নম্বর ফটকের সামনের নতুন রাস্তার মোড়, ছাত্রী হোস্টেলের সামনে, ফিরিঙ্গি মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, কলেজ ক্যাম্পাসে রাতে পর্যাপ্ত সড়কবাতি স্থাপন করতে হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবৈধভাবে বসা দোকানপাট উচ্ছেদ ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে বৈধ দোকানপাট বসার অনুমতি দিতে হবে, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও কলেজ ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোয় ২৪ ঘণ্টা আনসার সদস্য মোতায়েন করতে হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান ফটকের (২ নম্বর গেট) সামনে মেডিকেল কলেজ থেকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল সড়কের মোড় পর্যন্ত সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল নিশ্চিত করতে হবে।

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মেহেরাজ হোসেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এ খবর পাওয়ার পর দুপুর থেকেই মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে হাসপাতালের ফটক (১ নম্বর গেট) হয়ে মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের থামাতে পারেনি। পরে শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে অনেক যানবাহন আটকা পড়ে।

খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নিতে বলেন। তবে শিক্ষার্থীরা রাজি হননি। পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল আলমসহ শিক্ষকেরা সেখানে গিয়ে দাবি পূরণে আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।
রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মেহরাজ হত্যার বিচারসহ ছয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের দাবি যৌক্তিক। কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

কলেজ প্রশাসন ও পুলিশ জানায়, গত ২৩ নভেম্বর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সামনে খাবারে ময়লা থাকা নিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রেতা ফরিদ ব্যাপারী (৫১) ও তাঁর ছেলে শাকিল ব্যাপারীর সঙ্গে তর্ক হয় মেহেরাজের। একপর্যায়ে মেহেরাজকে ছুরিকাহত করেন শাকিল ব্যাপারী।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৮ নভেম্বর তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

মেহেরাজ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুখিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ গাজীর ছেলে। বর্তমানে পরিবারের সবাই রাজধানীর পশ্চিম কাফরুল এলাকায় বাস করেন।