‘কাজে না আসলি তো প্যাটে ভাত জোটপে না’

তীব্র শীতের মধ্যে হিমশীতল পানিতে দাঁড়িয়ে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত কয়েকজন শ্রমিক। আজ শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি মাঠেছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় গত বুধবারের মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে এক দিনেই তা কমেছে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জেলায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা আছে ৯৭ শতাংশ।

১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নেমে এলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। সঙ্গে উত্তর থেকে ধেয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষিশ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষেরা।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একলাফে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়। এরপর গতকাল তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হলেও আজ তা ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।

আরও পড়ুন

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় রোদের তাপ ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত করতে পারছে না। সেই সঙ্গে উত্তর থেকে ধেয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামীকাল রোববার থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে এবং শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

কৃষিপ্রধান জেলা চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে চলছে বোরো ধান রোপণের ভরা মৌসুম। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে কৃষিশ্রমিকেরা মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ এবং ঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে একের পর এক চারা রোপণ করছেন কৃষিশ্রমিকেরা।

সদর উপজেলার হাজরাহাটি মাঠে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত কয়েকজন কৃষিশ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের একজন সদর উপজেলার কবিখালী গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকালতি আমরা সাতজন পানির ভেতরে দাঁড়ি ধানের চারা লাগাইনোর কাজ করচি। পানি তো না, য্যানো ঠান্ডা বরপ। এক দিন অ্যারাম কালা পানিতি কাজ কল্লি আর মন বলে না পরেরদিন পানিতি লাবি। উপায় নেই। কারণ, কাজে না আসলি তো প্যাটে ভাত জোটপে না।’ এ সময় সেখানে উপস্থিত অন্য শ্রমিকেরাও তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করেন।

আরও পড়ুন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ জন্য ১ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। শীতের কারণে শ্রমিকের সংকট দেখা দেওয়ায় গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে, অর্থাৎ ২২ শতাংশ (প্রায়) জমিতে চারা রোপণ সম্ভব হয়েছে।

কার্যালয়ের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, শীতের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে যান্ত্রিক উপায়ে ধানের চারা রোপণ পদ্ধতি চালু হয়েছে। কৃষকদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।