বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’র কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শেফা নূর ইবাদির ‘আত্মহত্যা’র কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে গতকাল বুধবার তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। হলের প্রাধ্যক্ষ হেনা রানী বিশ্বাসকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার হেনা রানী বিশ্বাস বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শেফার আত্মহত্যার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য এই কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষক সুমনা রানী সাহা ও হোসনে আরা ডালিয়া।
এর আগে গত রোববার রাত ১১টার দিকে শেফা নূর ইবাদি নামের ওই ছাত্রীকে হলের পাঠকক্ষের জানালার গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। শেফা নূর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়তেন। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বঙ্গমাতা হলের ১৪১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
প্রাধ্যক্ষ হেনা রানী বিশ্বাস আরও বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষার্থী কেন আত্মহননের পথ বেছে নিল, সেটি তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করব। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জেনেছি, একটি ছেলের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। তদন্তে আমরা সবগুলো বিষয়ই খতিয়ে দেখব।’ তিনি বলেন, তাঁরা ২৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপর প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সঙ্গে শেফার প্রেম ছিল। দুজনের মনোমালিন্য হওয়ায় ওই ছাত্রকে ভিডিও কলে রেখে তিনি গলায় ফাঁস নেন। এর আগে রোববার বেলা সোয়া ১১টায় কোটা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেন শেফা। কর্মসূচিতে তাঁকে প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায়। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গত সোমবার বিকেলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার ভিকাখালী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে শেফাকে দাফন করা হয়। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা শেফার এমন অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
শেফার বাবা মো. শাহজাহান রাঢ়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কত স্বপ্ন ছিল শেফা লেখাপড়া শেষ করে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে। দুই দিন আগেও ওর বড় বোনকে মেসেজ (বার্তা) দিয়ে অনলাইন ক্লাসের জন্য একটি ল্যাপটপ লাগবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। কিছুই বুঝতে পারলাম না। এত উচ্ছল, প্রাণবন্ত মেয়েটা এভাবে কেন অকালে আমাদের ছেড়ে গেল।’ তিনি বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে শেফা সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি বছরের সাড়ে পাঁচ মাসে তিনজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গত বছরের জুলাইয়ে মেসের কক্ষে ‘আত্মহত্যা’ করেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া দেড় বছরে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। এ নিয়ে অভিভাবক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।