পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে দ্রুত প্রচারণা শুরু করতে চান দেলোয়ার হোসেন

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দেলোয়ার হোসেন।
ফাইল ছবি

নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে অপহৃত সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন এখনো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে তিনি দ্রুত নির্বাচনী প্রচারণা শুরুতে চান।

আজ রোববার সকালে দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘অনেকটা সুস্থ বোধ করছি। চিকিৎসক হাসপাতাল ত্যাগ করার অনুমতি দিলে শিগগিরই সিংড়ায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করব। তবে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে আমি দু–এক দিনের মধ্যে প্রচারণা শুরু করতে চাই।’

আরও পড়ুন

গত সোমবার বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এর পাঁচ ঘণ্টা আগে তাঁর ভাইসহ এক আওয়ামী লীগ নেতাকে একই এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা মুমূর্ষু অবস্থায় প্রার্থী দেলোয়ারকে গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওই দিন রাতে তাঁর ভাই মুজিবর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এ পর্যন্ত পুলিশ দুই দফায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়া সুমন আহমেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি প্রতিপক্ষ প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ নিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের কথা স্বীকার করেন। এ সময় তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন।

অভিযুক্ত লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের শ্যালক। তিনি উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করছেন। প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে এখানে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ এপ্রিল (কাল সোমবার)।

আজ কারণ দর্শানোর জবাব দেবেন লুৎফুল হাবীব
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ গত শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে আসেন। সেখানে উপস্থিত সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি লুৎফুল হাবীবকে ফোন করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। গতকাল উপজেলা আওয়ামী লীগ জরুরি সভা করেও তাঁকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ওই ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়। আজ রোববার কারণ দর্শানোর শেষ দিন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ব্যাপারে লুৎফুল হাবীব এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেননি। তিনি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমসহ কাউকে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লুৎফুল হাবীব বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আজ নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের ব্যাখ্যা দেবেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে জানা যায়, লুৎফুল হাবীব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি শেষ অবধি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। তাঁর একজন ঘনিষ্ঠজন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি। তাহলে দল থেকে কেন তাকে সরে দাঁড়ানোর চাপ দেওয়া হচ্ছে? প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হয়েছে। আইনগত বাধা না থাকলে তাঁর নির্বাচনে অংশ নিতে সমস্যা নেই।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের শ্যালক। তিনি দল করলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা মানবেন—এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর কথাও তাঁর শোনা উচিত।