ধর্মঘটের প্রথম দিন চললেও আজ রূপসা সেতুতে যাত্রীবাহী বাস পারাপার শূন্যে নেমেছে

রূপসা নদীর খানজাহান আলী সেতুতে আজ রাত ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস পারাপার হয়নি। আজ সকালে ফাঁকা সেতুর চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার খান জাহান আলী সেতু দিয়ে কোনো যাত্রীবাহী বাস পার হয়নি। বাগেরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল বা ঢাকা থেকে খুলনা যেতে পার হতে হয় এই রূপসা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি। অথচ ধর্মঘটের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবারও এই সেতু দিয়ে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বড় বাস পার হয়েছিল ৯৭টি। এদিন যাত্রীবাহী মিনিবাস পার হয়েছিল ২৩টি। অথচ আজ রাত ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী কোনো বড় বাস বা মিনিবাস পারাপার শূন্যতে নেমেছে।

রূপসা সেতুর টোল প্লাজা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এই হিসাবের মধ্যে সরকারি টোল ফ্রি বাস-মিনিবাস রাখা হয়নি। যাত্রীবাহী বাস পার না হলেও প্রতিদিনের মতো আজও সরকারি টোল ফ্রি ৩০টি বাস-মিনিবাস এই সেতু দিয়ে পার হয়ে পায়রা বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে গেছে। ধর্মঘটের প্রথম দিনেও যথারীতি এই বাসগুলো সেতু দিয়ে পার হয়। এসব বাসের মধ্যে ১৬টি মিনিবাস ও ১৪টি বড় বাসই ছিল, যেগুলোতে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ সরকারি ও প্রশাসনে কর্মরতরা প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন।

আরও পড়ুন

আজ এই সেতু দিয়ে অবশ্য ২ হাজার ৬৭১টি মোটরসাইকেল-ভ্যান পারাপার হয়েছে। বেলা ১টা পর্যন্ত হিসাব এটি। ধর্মঘটের প্রথম দিন সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল-ভ্যান পার হয়েছিল ২ হাজার ৫২৭টি।

এবার ধর্মঘট শুরুর আগের দিন একটি সাধারণ দিনের চিত্র দেখা যাক। ২০ অক্টোবর ২৪ ঘণ্টায় খান জাহান আলী সেতুটি দিয়ে ৮৭৫টি বাস-মিনিবাস পার হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনামুখী বাস-মিনিবাসই ছিল ৪৫০টি। এদিনও ভ্যান ও মোটরসাইকেল পারাপার করেছিল আড়াই হাজারের কিছু বেশি।

ধর্মঘটের প্রথম দিনও এই সেতু দিয়ে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বড় বাস পার হয়েছিল ৯৭টি। মিনিবাস পার হয়েছিল ২৩টি। অথচ আজ বাস বা মিনিবাস পারাপার শূন্যতে নেমেছে।

যদিও ধর্মঘটের ঘোষণায় বলা হয়েছিল, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে ওই অবৈধ যান চলাচল ও কাউন্টার বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সব রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে। এ ঘোষণা অনুযায়ী দূরপাল্লার বাস চলাচলের কথা ছিল না। কারণ, সেগুলোর মালিক পরিবহন সমিতির অধীন। এরপরও ঢাকা থেকে খুলনা বা বরিশাল থেকে খুলনা আন্তবিভাগীয় দূরপাল্লার বাসগুলো আজ একটিও চলতে দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশের সঙ্গে এই ধর্মঘটের সঙ্গে সম্পর্ক নেই দাবি করা হলেও পথে পথে যানবাহনকে লাঠি হাতে বাধা, ভ্যান-মোটরসাইকেল থেকেও লোকজনকে নামিয়ে দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে সকাল থেকে।

বাস না চলায় পায়ে হেটে, বাইসাইকেল নিয়ে এবং ভ্যানে সেতু পার হয়ে খুলনা যাচ্ছেন মানুষ। আজ শনিবার সকালে খুলনার রূপসা নদীর খানজাহান আলী সেতুতে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

মানুষ পায়ে হেঁটে পার হচ্ছেন সেতু

ধর্মঘট ছাড়াও পথে পথে বাধার কারণে আজ সকাল থেকে অনেককে দেখা গেছে জরুরি প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে এই সেতু পার হতে। সকালে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে নড়াইল থেকে খুলনার উদ্দেশে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তির সঙ্গে টোল প্লাজায় কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি বলেন, খুলনা থেকে রূপসা সেতু পর্যন্ত আসতে পথে ৫ জায়গায় তাঁকে দাঁড় করানো হয়। লাঠি সঙ্গে হাতে ব্যক্তিরা তাঁর পরিচয় জানতে চান। অফিসের আইডি কার্ড দেখে, কোথায় যাচ্ছি কেন যাচ্ছি, এসব জেনে তারপর গাড়ি আসতে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

শ্বশুরের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ঢাকা থেকে খুলনা রওনা দিয়েছিলেন রানী রায় (৩২) নামের এক পোশাকশ্রমিক নারী। সঙ্গে তাঁর স্বামীও ছিলেন। ঢাকা থেকে বাসে খুলনার টিকিট কাটলেও গোপালগঞ্জের পর বাসটি আর যায়নি। বাসের চালক-হেলপার যাত্রীদের গোপালগঞ্জে নামিয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, আর যেতে পারবেন না। রানী আর তাঁর স্বামী পরে সেখান থেকে ভেঙে ভেঙে মোটরসাইকেল ও ভ্যানে করে আজ সকালে এসেছিলেন খুলনার রূপসা খেয়াঘাটে। সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ট্রলার বন্ধ থাকায় আবার ভ্যানে করে রূপসা সেতুর কাছে আসেন তাঁরা। পরে এই সেতু হেঁটে পার হতে দেখা যায় তাঁদের।

রানী রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে রাস্তায় কী হয়েছে আমরা আসলে জানি না। আমার শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকা থেকে আসছি। খুলনার পাইকগাছায় যাব। এখন যেভাবেই হোক যেতে হবে।’

রূপসার খানজাহান আলী সেতুর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কেউ যান চলাচল বন্ধের বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তাঁরা জানান, যানবাহন চলাচল কমে যাওয়ায় অনেক মানুষ হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। বাস চলাচল কমলেও মোটরসাইকেল-ভ্যানের মতো ছোট ছোট যানবাহন চলছে বেশি।