চাঁদার দাবিতে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি, পরিচয় দিলেন সাজ্জাদের লোক
একটি নির্মাণাধীন ভবনে পাইলিংয়ের কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। হঠাৎ ১০ থেকে ১২ জন যুবক দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। হামলাকারীদের একজনের হাতে ছিল পিস্তল। বাকিদের হাতে রামদা, কিরিচ ও লোহার রড। ঢোকার পর অস্ত্র উঁচিয়ে পরপর চার রাউন্ড গুলি করেন ওই যুবক। তাঁর নেতৃত্বে ভাঙচুর করা হয় নির্মাণসামগ্রী। মারধর করা হয় শ্রমিকদের। নিজেদের তাঁরা ‘সাজ্জাদ ভাই’ ও ‘ইমন ভাইয়ের’ লোক বলে পরিচয় দেন।
প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজির এমন ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার কুয়াইশ রোডের উত্তরা হাউজিং এলাকায়। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের নেতৃত্ব দেওয়া যুবকের পিস্তল হাতে থাকা যুবকের নাম মো. আসিফ। তাঁর সঙ্গে থাকা আরও একজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁর নাম মো. রনি। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। হামলাকারীরা নিজেদের সাজ্জাদ ও ইমনের লোক পরিচয় দিয়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। একই দাবিতে তাঁরা আগেও দুবার নির্মাণাধীন ওই জমিতে হামলা করেছিলেন।
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে দুইবার ভবনটিতে সশস্ত্র যুবকেরা চাঁদার দাবিতে এসেছিলেন। প্রতিবার ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়ার জন্য তাগাদা দিয়ে গেছেন। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে হুমকি দিয়ে যান জমির মালিকদের। অস্ত্রধারী আসিফ বর্তমানে কারাগারে আটক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী। তিনি কারাগারে থাকলেও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোবারক হোসেন ওরফে ইমন।
সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ মূলত চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ৮ ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলায় অভিযুক্ত (পরে খালাসপ্রাপ্ত) ও বর্তমানে বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। বড় সাজ্জাদের হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে আধিপত্য বজায় রাখতে অপরাধ সংঘটিত করতেন ছোট সাজ্জাদ।
পুলিশ জানায়, ছোট সাজ্জাদের বাহিনীতে রয়েছেন ২৫ জন সক্রিয় সদস্য। তাঁকে গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিংমল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বাহিনীর হাল ধরেন ইমনসহ পলাতক বাকি সহযোগীরা।
চাঁদা না পেয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলির ঘটনায় জমির মালিকদের পক্ষ থেকে জহিরুল ইসলাম নামের একজন বাদী হয়ে গতকাল রোববার বায়েজীদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, নগরের বায়েজীদ বোস্তামীর কুয়াইশ রোডের উত্তরা হাউজিং এলাকায় ৬ কাঠার একটি প্লটে ২৪ জন ব্যক্তি একটি বহুতল ভবন তৈরির কাজ শুরু করেন চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর। কাজ শুরু করার কয়েক দিন পর ভবনটির প্রকৌশলী মো. হাবিবকে হুমকি দেওয়া হয়। হুমকিদাতা নিজের পরিচয় দেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সহযোগী ইমন বলে। দাবি করা হয়, ১৫ লাখ টাকা চাঁদা। চাঁদার টাকা না পেয়ে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। নির্মাণশ্রমিকদের মারধর করেন তাঁরা।
জানতে চাইলে মামলার বাদী জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাজ্জাদের লোকজন গুলি করার পর ভয়ে শ্রমিকেরা কেউ কাজ করতে আসছেন না। এখনো কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। আমরা নিজেরাও আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এসবের মধ্যে নেই। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ এসব করছে। ইমনকে আমি চিনি না। ’ ছোট সাজ্জাদ কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বায়েজীদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদার জন্য গুলি করা সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।