বাঁচানো গেল না মুখপোড়া হনুমানটিকে

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহতাবস্থায় ৪ সেপ্টেম্বর সকালে মুখপোড়া হনুমানটিকে উদ্ধার করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর তোলা ছবি
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত মুখপোড়া হনুমানটিকে বাঁচানো যায়নি। আহতাবস্থায় উদ্ধারের ১০ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় হনুমানটি আজ বৃহস্পতিবার সকালে মারা গেছে। এর আগে হনুমানটির দুর্বল হয়ে পড়ায় স্যালাইন দেওয়া হচ্ছিল।

গত সোমবার থেকে হনুমনাটি খাওয়াদাওয়া করছিল না। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্রাধিকারের কর্মীরা হনুমানটির চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মঙ্গল ও বুধবার হনুমানটির শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়। পাশাপাশি হনুমানটিকে বিভিন্ন ফল খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। এরপরও শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল।

আরও পড়ুন

প্রাধিকারের সভাপতি মো. মাহাদী হাসান বলেন, ‘মুখপোড়া হনুমানটিকে বাঁচানো যায়নি, এটি আমাদের কাছে খুবই কষ্টের। হনুমানটিকে বাঁচাতে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম। হনুমানটির মৃত্যুতে সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।’

মুখপোড়া হনুমানটি অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় গাছ থেকে পড়ে যায়। এরপর অপরিণত মৃত বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। ৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসা চলাকালীন তোলা ছবি
ছবি: আনিস মাহমুদ

মাহাদী জানান, যে কয়দিন তাঁরা হনুমানটিকে সেবা দিয়েছেন, সেটি ভালো সাড়া দিচ্ছিল। স্যালাইন দেওয়ার সময় নিজের হাত খাঁচার বাইরে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। খাওয়াদাওয়া না করায় হনুমানটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাঁরা মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করছিলেন। তবে বুধবার রাতের পর থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। রাত দুইটা পর্যন্ত তাঁরা হনুমানটির পাশে ছিলেন। পরে সকালে তাঁদের আরেকটি দল গিয়ে হনুমানটিকে মৃত অবস্থায় পায়।

আরও পড়ুন

৪ সেপ্টেম্বর সকালে সিলেট বিমানবন্দরসংলগ্ন কাকুয়ারপাড় এলাকার সড়কের পাশে একটি বিদ্যুতের খুঁটির নিচ থেকে মুখপোড়া হনুমানটি পাওয়া যায়। এটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। হনুমানটিকে উদ্ধার করেছিলেন রিপন কুমার দেব (৩৩) নামের এক ট্রাকচালক। হনুমানটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রায় ৩৫ ফুট ওপর থেকে পড়ে আহত হয়েছিল। রিপন আহত হনুমানটিকে সেবা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তুলেছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর সকালে সেটি গাছেও উঠেছিল। তবে বিকেলের দিকে হনুমানটি গাছ থেকে নিচে পড়ে আহত হয়। এ সময় হনুমানটি অপরিণত মৃত বাচ্চা জন্ম দেয়। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে হনুমানটি।

হনুমানটিকে বাঁচাতে প্রাধিকারের কর্মীরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন। আজ সকালে হনুমানটির মৃত্যুতে সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে
ছবি: আনিস মাহমুদ

হনুমানটির চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসেন পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি প্রাধিকারের কর্মীদের নিয়ে হনুমানটিকে রিপন কুমার দেবের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএমসি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে এর চিকিৎসা শুরু হয়।

আরও পড়ুন

প্রাধিকার জানায়, মুখপোড়া হনুমানটি অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় গাছ থেকে পড়ে যায়। এরপর অপরিণত মৃত বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। অন্যদিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ায় শরীরের বিভিন্ন স্থান ছিলে গিয়েছিল। পরে হনুমানটির শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর হনুমানটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছিল। এর মধ্যে গত সোমবার থেকে এটি খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। খাওয়ায় অরুচি থেকে শরীর আরও দুর্বল হচ্ছিল। গত সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত কেবল দুই-এক কামড় শসা ও পেঁপে খেয়েছে। এই খাবার তার শরীরের চাহিদার তুলনায় কম। এ জন্য গত দুই দিন হনুমানটির শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়। হনুমানটির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের ফ্রিজে রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে করণীয় সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।