ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত নবীন শিক্ষার্থীরা, তুলেছেন মনোনয়নপত্র

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম তুলছেন প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ দুপুরে রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রথম বর্ষের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটদান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটদান ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়ার কথা জানানো হয়। এ জন্য ওইদিন নির্বাচনের তারিখ ঠিক রেখে তফসিল পুনর্বিন্যাস করে নির্বাচন কমিশন। নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি দিন হিসেবে আজ বুধবার মনোনয়নপত্র তোলার সুযোগ রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি এবং নির্বাচনকে আরও অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় এক দিন বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণার পর গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। এতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান জানান, এটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার অন্যতম বিজয়। এমফিল ও অন্যান্য মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থীদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার করার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সম্ভাব্য ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই সমন্বয়ক প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু নির্বাচনের তারিখ অপরিবর্তিত রেখে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে, তাই বিষয়টি সবার জন্যই ইতিবাচক।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যা ভাবছেন

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয় ১৭ আগস্ট। সেদিন নানা আয়োজনে বিভাগগুলো তাঁদের বরণ করে নেয়। এ হিসাবে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান মাত্র কয়েক দিনের। এ সময়ের মধ্যে তাঁরা কেবল ক্যাম্পাসে পরিচিত হতে শুরু করেছেন। এবার তাঁদের ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। কেউ কেউ প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণও করছেন।

গতকাল ক্যাম্পাসে কথা হয় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রেদোয়ান হকের সঙ্গে। তিনি দূর থেকে ছাত্রদলের একটি কর্মসূচি দেখছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘রাকসু কী জিনিস, সেটিই তো জানি না। এটি বোঝার চেষ্টা করছি। এ কারণে বিভিন্ন কর্মসূচি দেখছি। তাদের বক্তব্য শুনছি।’

আরও পড়ুন

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াইস করনি বলেন, গতকালই তাঁরা ক্লাস রোল ও হল বরাদ্দ পেয়ে গেছেন। এটি করতে নাকি প্রশাসনের কয়েক মাস সময় লাগে। সেই সঙ্গে তাঁরা ভোটাধিকারও পেয়েছেন। যাঁদের কারণে এসব দ্রুত হয়েছে, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এখন নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে ভোটের জন্য। তাঁরা ক্যাম্পাসে নতুন। এ কারণে যেসব প্রার্থী শিক্ষার্থীবান্ধব, ইশতেহার ভালো, তাঁদেরই ভোট দেবেন।

ভোটাধিকার পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখেছেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য রাকসু নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। স্বাভাবিকভাবে অন্য শিক্ষার্থীদের মতো আমারও প্রত্যাশা ছিল, ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা রাকসুতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নবীন শিক্ষার্থীদের রাকসুতে অন্তর্ভুক্ত করছে।’

আরও পড়ুন

এদিকে ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের তন্ময় নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আজ মনোনয়নপত্র উত্তোলন করবেন বলে জানিয়েছেন।

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী তাসকিন আহমেদ অনিক বলেন, ‘আমরা ভোটাধিকার চেয়েছিলাম। অবশেষে আমাদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।’

মনোনয়নপত্র সংগ্রহে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা

আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রথম বর্ষের ৬ জন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছে রাকসু নির্বাচন কমিশন।

বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র নেন লোকপ্রশাসনের বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাঈদ হাসান ইবনে রুহুল। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত। আমাদের ভোটাধিকার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য ছাত্রদল ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আজ মনোনয়নপত্র তুলেছি, তবে কোন পদে লড়াই করবো—এখনো ঠিক করিনি।’

এ ছাড়া ইতিহাস বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মো. মাসুম অর রশিদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি রাকসুর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।