আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলছে পুলিশ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ম্যানহোল থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী নয়নাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। শনিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের নিউমার্কেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের ম্যানহোল থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। নয়নাল উদ্দিন (৬০) নামের ওই আওয়ামী লীগ কর্মী মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন। এর প্রতিবাদে আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নয়নাল উদ্দিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ময়নাতদন্ত এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে শনিবার বিকেলে রাজশাহী নিউমার্কেটের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয় শ্রমিক লীগের মহানগর কমিটি। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে শ্রমিক লীগের নেতারা দাবি করেন, নয়নালকে হত্যা করে মরদেহ ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। প্রভাবশালীর চাপে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে যাচ্ছে পুলিশ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে সঠিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসেনি বলেও তাঁরা দাবি করেন। তাই তাঁরা পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবি জানান।

আরও পড়ুন

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহাবুল আলম। সাধারণ সম্পাদক আক্তার আলী সঞ্চালনা করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোহেল, জাতীয় শ্রমিক লীগ মহানগরের সহসভাপতি সেলিম রেজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান, রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রেজায় করিম প্রমুখ।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী নিউমার্কেট এলাকায় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের ম্যানহোল থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী নয়নাল উদ্দিনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওমর ফারুকের একতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ের পশ্চিম দিকে একই সীমানাপ্রাচীরের ভেতর ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামে তাঁর একটি বহুতল ভবন রয়েছে। থিম ওমর প্লাজার প্রথম থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত শপিং মল। আর সপ্তম থেকে দশম তলা পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্ট। ভবনের ১০ তলার অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন ওমর ফারুক চৌধুরী।

আরও পড়ুন

নয়নালের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বোন কুলসুম বেগম অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। সম্প্রতি নয়নালের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছে পুলিশ। এতে বলা হয়েছে, ওপর থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে নয়নাল মারা যান। এখন মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরের শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি তিনি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, নয়নাল ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। মাহাফুজুর রহমান বলেন, নয়নাল অসুস্থ ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন বাড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন। এতে মুখমণ্ডল ও মাথায় জখম হয়েছিল। একটি ওষুধের দোকানে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়েছিল। তাই নয়নাল পড়ে গিয়ে মারা গেছেন বলে তাঁর কাছেও মনে হচ্ছে। এর বাইরে তদন্তে কিছু পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

মাহাফুজুর রহমান বলেন, ‘যেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরাটি নষ্ট ছিল। সেটি চালু থাকলে সবই দেখা যেত। এখন বিষয়গুলো নিয়ে সিনিয়র স্যারেরা বসবেন। তারপর একটা সিদ্ধান্ত হবে। তবে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’ প্রভাবশালীর চাপে কোনো ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।