মেঘনার পাড়ে ‘আড়াই ঘণ্টার হাট’, দৈনিক বেচাকেনা ২৫-২৬ লাখ টাকার টাটকা মাছ
মেঘনা নদীর তীরে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুই দফায় মোট আড়াই ঘণ্টার জন্য বসে হাটটি। এই অল্প সময়ে প্রতিদিন গড়ে বেচাকেনা হয় প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকার তাজা মাছ। জেলে, আড়তদার ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হইচই আর হাঁকডাকে মুখর থাকে হাটটি।
এই হাটের অবস্থান চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকায় মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে। এটি ‘বাবুরবাজার হাট’ নামে পরিচিত। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই হাট বসে। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা মিটিয়ে এখান থেকে মাছ যায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি জেলা-উপজেলায়।
গতকাল শুক্রবার সকালে বাবুরবাজার হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেক লোকের জটলা, হইচই ও কোলাহল। আড়তদার, পাইকার ও সাধারণ ক্রেতাদের দর-কষাকষি ও হাঁকডাকে পরিবেশ জমজমাট। মেঘনার তীরে ভেড়ানো নৌকা থেকে জেলেরা ডালায় করে ছোট-বড় বিভিন্ন মাছ এনে রাখছেন আড়তদারদের কাছে। তাঁর কাছ থেকে ওই মাছ কিনছেন পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা। ইলিশ, পাঙাশ, রুই, কাতলা, চেউয়া, বাইলা, রিঠা, পোয়া, চাপিলা, শিং ও শিলংসহ আরও নানা জাতের মাছ উঠছে সেখানে। দরদাম শেষে ক্রেতারা আড়তদারদের কাছ থেকে সেগুলো কিনছেন।
সেখানে কথা হয় ষাটনল এলাকার বাসিন্দা ও ওই বাজারের মাছের আড়তদার ফুলচাঁন বর্মণ, জেলে সঞ্জিত বর্মণ এবং পাইকারি ক্রেতা মো. খবির ও বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে।
ফুলচাঁন বলেন, প্রায় ৬০ বছর ধরে এই মাছের হাট বসছে। উপজেলার ষাটনল, শিকিরচর, সাদুল্লাহপুর, বেলতলী, দশানী, ছেংগারচর, জীবগাঁও, এখলাশপুর, মোহনপুর, বোরোচর ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়াসহ আরও কয়েকটি এলাকার চার থেকে পাঁচ শতাধিক জেলে মেঘনায় মাছ ধরে প্রতিদিন এখানে আড়তদারদের কাছে রাখছেন। আড়তদারদের কাছ থেকে ওই মাছ বিক্রি হচ্ছে নিলামে। সেগুলো কিনছেন স্থানীয় পাইকারি ক্রেতারা। তাঁদের কাছ থেকে মাছ কিনছেন খুচরা ক্রেতা ও স্থানীয় লোকজন। সকাল-বিকেলের আড়াই ঘণ্টার হাটটিতে প্রতিদিন গড়ে আসে প্রায় পাঁচ মেট্রিক টন মাছ। সেগুলো বিক্রি হয় প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকায়। ইলিশ, রুই ও পাঙাশসহ দেশি জাতের সকল প্রকার মাছ উঠে এখানে। তরতাজা মাছ কিনতে দূরের লোকজনও আসেন এখানে।
ছেংগারচর সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. আলম বলেন, হাটটির পাশেই মেঘনার তীর। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এখানে কিছুটা কম দামে তাজা ও ফরমালিনমুক্ত মাছ পাওয়া যায়। এ জন্য প্রায়ই এখান থেকে মাছ কেনেন তিনি। এক হাজার টাকায় দুই কেজি ইলিশ কিনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই হাট গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভরসার জায়গা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, মেঘনার পাড়ে তরতাজা মাছের হাটটি অনেক পুরোনো। কিছুটা কম দামে মাছ বেচাকেনা হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন এখানকার জেলে, ক্রেতা ও বিক্রেতা সবাই। এ হাটের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে মৎস্য বিভাগ নজর রাখছে।