উপজেলা চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় সংসদ সদস্যের কর্মীরা জড়িত নন, সংবাদ সম্মেলনে দাবি
পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবের ওপর হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের কর্মীরা জড়িত নন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর পক্ষের নেতারা।
রোববার দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা এস এম ফরিদ উদ্দিন মোল্লা।
উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে করা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফরিদ উদ্দিন মোল্লা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার পর আওয়ামী লীগের কার্যালয় জনতা ভবন থেকে আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। শোভাযাত্রার মাঝামাঝি স্থানে ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন আ স ম ফিরোজ। কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর বাধার সম্মুখীন হন তাঁরা। তখন আ স ম ফিরোজ উপজেলা পরিষদের গেট থেকে ২০০ মিটার দূরে ওই গাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। ওই সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের মিছিলটি জনতা ভবনের দিকে যেতে চাইলে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাধা দেয়। তখন মোতালেব হাওলাদার ও তাঁর কর্মীরা বাধা ঠেলে সামনে যেত চাইলে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আবদুল মোতালেবের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে আ স ম ফিরোজের কর্মীরা জড়িত নন। আ স ম ফিরোজের সামনে ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, মানবজমিন, কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি পত্রিকায় ‘এমপির সামনে চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালের ওপর কারা হামলা চালিয়েছে, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান ফরিদ উদ্দিন মোল্লা। এ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার সময় উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজ। তাঁর সামনেই তাঁর নেতা-কর্মীরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। এমনকি সংঘর্ষের সময় মো. রিপন (৪৮) নামের আ স ম ফিরোজের এক অনুসারী পুলিশের ছোড়া ফাঁকা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বগা বন্দরের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আবদুল মোতালেবের ওপর হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁর ছেলে মো. মাহমুদ হাসান। এতে তিনি অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে ও হুকুমে সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।
মাহমুদ বগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে বগা বন্দরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন তাঁর পক্ষের নেতা–কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল মোতালেবের নেতৃত্বে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে মিছিলটি বের হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিল। সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের বাধা দেয়। তখন পুলিশ ও আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। অপর পাশেই লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজের সমর্থকেরা। তখন আ স ম ফিরোজ ছাদখোলা একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
একপর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকেরা দলীয় ও নিজ নিজ নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর আবদুল মোতালেবের সমর্থকেরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। তখন আবদুল মোতালেবের কর্মী-সমর্থকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। একপর্যায়ে আবদুল মোতালেবের ওপর হামলা চালান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ধারালো অস্ত্রধারী সমর্থকেরা। তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। থামাতে গিয়ে আহত হন অন্তত ১০ জন। আবদুল মোতালেব বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন বলে তাঁর মেয়ে মোসা. রেশমা জানিয়েছেন।
পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশ আহত হওয়ার অভিযোগে গতকাল রাতে অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন বাউফল থানার উপপরিদর্শক মো. মনির হোসেন।