ভাড়া ফ্ল্যাটকে প্রধান কার্যালয় দেখিয়ে নিবন্ধনের আবেদন বিএসডিপির, নেই সাইনবোর্ডও

খুলনার নিরালা প্রান্তিকা আবাসিক এলাকার এই ভবনকে প্রধান কার্যালয় দেখিয়েছে নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করা নতুন দল বিএসডিপি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে ১৪৭টি দল নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দিয়েছে। এর একটি বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি)। তবে দলটির প্রধান কার্যালয় হিসেবে খুলনার যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেটি একটি আবাসিক এলাকার আবাসিক ভবন। বাস্তবে সেখানে রাজনৈতিক তৎপরতার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

নতুন দলটির চেয়ারম্যানের নাম ড. বিভূতি রায়। তিনি জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের খলশিবুনিয়ায়।

নির্বাচন কমিশনে বিএসডিপি যে ঠিকানা প্রধান কার্যালয় হিসেবে দিয়েছে, সেটি খুলনার নিরালার প্রান্তিকা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত একটি চারতলা আবাসিক ভবন। মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দলীয় সাইনবোর্ড তো দূরের কথা, ভবনের নাম বা ঠিকানার কোনো ফলকও নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবনটির দুই মালিকের একজন কামরুল ইসলাম। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভূতি রায় আমার চারতলায় ভাড়া থাকেন। একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন তিনি। উনি বেশির ভাগ সময় বটিয়াঘাটায় থাকেন। মাঝে মাঝে বাসায় আসেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান জার্মানিতে থাকেন। তিনি সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর জামাতা।’

বাড়িটির চারজন ভাড়াটের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন বিভূতি রায় সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। একজন ভাড়াটে বলেন, মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে আসেন। পার্কিংয়ে অ্যাম্বুলেন্স থাকলে বোঝেন তিনি এসেছেন। তবে তাঁর সঙ্গে কোনো লোকজন তেমন আসতে দেখেননি। আর রাজনৈতিক দলের কোনো কিছু তো কোনো দিন চোখে পড়েনি।

আরও পড়ুন

অন্য একজন ভাড়াটে বলেন, ‘ঠিকানাটি শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ। তারপরও জেনে ভালো লাগছে একটা রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয় আমাদের বাসার সঙ্গেই। একসময় এনজিও খোলার হিড়িক পড়েছিল আর এখন রাজনৈতিক দল খোলার।’

নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া বিএসডিপির আবেদন ফরমে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে মাহবুব সুমন নামের একজন ফোন ধরেন। তিনি নিজেকে দলটির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দেন। দলীয় কার্যালয় কোথায় জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের অফিস খুলনার সোনাডাঙ্গায়।’ সোনাডাঙ্গার কোথায়—জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘সোনাডাঙ্গায় একটা আবাসিক আছে ওখানে। কোন আবাসিক আমার নাম মনে পড়ছে না, আমি তো ঢাকায় থাকি।’

প্রান্তিকা আবাসিক এলাকার কথা তুললে বলেন, ‘হ্যাঁ, ওটাই। আসলে নতুন পার্টি, অফিসে আমি বসিনি। ঈদের সময় খুলনায় গিয়ে ডকুমেন্টেশনের কাজ করে আসলাম।’ তিনি আরও দাবি করেন, তাঁদের ১৩ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। আর জেলায় কমিটি গঠনের কাজ চলছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে বিভূতি রায় বলেন, ‘দেশের জন্য কাজ করছি। দেশের জন্য আরও কাজ করতে চাই। আমাদের কিছু কথা আছে, এ জন্য রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চেয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটানো এবং দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আমাদের জেলা-উপজেলায় এখনো কমিটি নেই। তবে কিছু মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন।’

আরও পড়ুন