সাক্ষী সই দিয়েছেন বৃহস্পতিবার, ঘটনা ‘ঘটল’ শুক্রবার, এরপর হলো মামলা
পোশাক পরিহিত পুলিশ শুক্রবার রাত ১টা ১০ মিনিটে যশোর সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের নামেজ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছালে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নাশকতাকারী লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ১৪ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজনের কাছে থাকা বাজারের প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে থেকে আটটি ককটেল বা হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোর সদর থানায় করা একটি মামলার এজাহারে এই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মামলাটি করার সময় শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে চারটা। পুলিশের বাদী হয়ে করা এই মামলার এজাহারে সাক্ষী হিসেবে দুজনের নাম রয়েছে। তাঁদের একজন রামনগর গ্রামের বাসিন্দা ও রাজারহাট বাজারের নৈশপ্রহরী ওমর আলী।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওমর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরশু (বৃহস্পতিবার) রাতে রেজাউল নামের একজন দারোগা এসে বললেন, ‘‘ওমর আলী এই কাগজে সই করে দাও।” আমি সই করে দিলাম। এর বাইরে আমি আর কিছুই জানি না। কোথাও নাশকতা কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা আমার জানা নেই। এই বাজারে থাকতে হলে সই দিতে হবে। তাই দিয়েছি।’
বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইনে মামলাটি করেছেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মহিউদ্দীন। শুক্রবার আটক ১৪ জনসহ ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ‘আরও অনেক’-এর বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের বিএনপির কর্মী তামাজুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলামের কাছে থাকা বাজারের প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে চারটি করে মোট আটটি হাতবোমা উদ্ধার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ১৪ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজাতে পাঠানো হয়েছে।
মামলাটির তদন্তভার পেয়েছেন কোতোয়ালি থানার এসআই শরিফুল ইসলাম। সাক্ষীর বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে সাক্ষী তো অনেকজন থাকেন। সবার নাম তো এজাহারে উল্লেখ করা যায় না। চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়ার আগে অন্য সাক্ষীদেরও বক্তব্য সংযুক্ত করা হবে।’
এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে বাঘারপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরও একটি মামলা করেছে পুলিশ। এসআই সজলের করা মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মোট ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, বাঘারপাড়া উপজেলার মাহমুদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় বিএনপি-জামায়াতের একদল লোক হাতুড়ি, রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। তখন পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে আটক করে। পরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অবশ্য বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান বলেন, শুক্রবার বিকেলে মাহমুদপুর বিদ্যালয় মাঠে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলন ছিল। নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে বসতেই বিএনপির ১৬ জন কর্মীকে পুলিশ আটক করে। পরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। সেখানে লাঠিসোঁটা ও রড থাকার প্রশ্নই আসে না।
এদিকে শনিবার কেশবপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আবদুল আজিজসহ পাঁচজনকে শনিবার করা কোতোয়ালি থানার মামলায় ও অপর পাঁচজনকে মণিরামপুর থানার আগের পুরোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, গত ২ দিনে যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৬০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। কোতোয়ালি ও বাঘারপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি ‘গায়েবি’ মামলায় বিএনপির ৯১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক শ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশে যাতে কর্মীরা যোগ দিতে না পারেন, এ জন্য কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে পুলিশ এসব গায়েবি মামলা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ডিবি পুলিশ যশোরের ওসি রুপম কুমার সরকার বলেন, ‘ধরপাকড়ের বিষয়ে আমার কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই।’