সিলেটে ইউএনওর ‘নির্যাতনের’ প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে পাথর কোয়ারি চালুর দাবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ‘বারকিবন্ধন ও সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন গণমাধ্যমকর্মী আবুল হোসেন। আজ রোববার বেলা তিনটায়ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দের বিরুদ্ধে বারকি নৌকার শ্রমিকদের ‘নির্যাতনের’ অভিযোগে সমাবেশ হয়েছে। আজ রোববার বেলা ৩টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই সেতুর পূর্ব পাড়ে বারকি বাঁচাও আন্দোলন সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বারকিবন্ধন ও সমাবেশ’ থেকে বক্তারা জেলার সব কটি পাথর কোয়ারি চালুর দাবি জানিয়েছেন। দাবি না মানলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

সমাবেশকারীদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার ধলাই নদে ইউএনওকে বহনকারী একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাথর বহনকারী একটি বারকি নৌকাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে দেন। বারকি শ্রমিকদের ওপর ইউএনওর এই ‘অমানুষিক নির্যাতনের’ বিচারের পাশাপাশি পাথর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ভোলাগঞ্জসহ সিলেটের সব পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে পাথর কোয়ারির মূল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডিসি) জেলার পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ রেখেছে। জেলা প্রশাসন বিএমডিসির সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। জেলার চার উপজেলায় সাতটি পাথর কোয়ারি রয়েছে। এসব কোয়ারিতে ২০০৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৯৬ শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার দাবি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর। তাদের ভাষ্য, অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাথর তোলার কারণে সিলেটের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভূমির ক্ষয়ক্ষতি এবং কোয়ারিগুলোতে প্রাণহানির মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রকৃতি আবারও স্বস্থানে ফিরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পাথর কোয়ারিগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী হবে।

আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন গণমাধ্যমকর্মী আবুল হোসেন। বারকি বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সভাপতি কবীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সহসভাপতি আসাদ মিয়া, কবি এমরান আলী, স্থানীয় মুরব্বি ইমাম হোসেন, আজাদ মিয়া ও আবদুল হাসিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

‘পেটে যদি ভাত না থাকে, পরিবেশ দিয়ে কী হবে?’ মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল হোসেন বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে অর্থাৎ হাত দিয়ে তাঁরা পাথর তুলতে চান। এতে পরিবেশ বিনষ্ট হবে না। এই সুযোগটুকু দেওয়া উচিত। পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় এখন লাখ লাখ মানুষ বেকার। বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে না দিয়ে পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অমানবিক একটা কাজ।

আবুল হোসেন বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পাথর কোয়ারিগুলো সরকার খুলে না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজপথে থাকতে হবে। এমন আন্দোলন করতে হবে যে আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হবে পাথর কোয়ারি খুলে দিতে। বক্তৃতায় আবুল হোসেন বারকি শ্রমিকদের প্রতি ইউএনওর ‘অমানুষিক নির্যাতনের’ প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁকে আগামী তিন দিনের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। তা না হলে ইউএনও কার্যালয় ঘেরাও থেকে শুরু করে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন

অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধভাবে পাথর তুলে কিছু ব্যক্তি বারকি নৌকা দিয়ে ফিরছিলেন। আমরা তাঁদের নৌকাটি থামাতে বলি। কিন্তু তাঁরা আমাদের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে তীরে উঠে যান। আমাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করা হলেও সেটি গিয়ে বারকি নৌকায় ধাক্কা লাগে। এখন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারী একটা মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিডিওটি ছড়িয়ে আমাকে বিতর্কিত করতে ভুল একটা বার্তা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।’

ইউএনও আরও বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে এ উপজেলায় যোগদান করেই তিনি অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে নানা ব্যবস্থা নিয়েছেন। গত ২৯ মে একটা প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে পাথর চুরির মামলা দিয়েছেন। এর পর থেকেই এ মহলটি তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত। তাঁর কার্যক্রমকে থামাতেই ওই মহলটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। তাঁরা মূলত পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতেই আন্দোলনে নেমেছেন।

আরও পড়ুন