গুলিবিদ্ধ সহপাঠীকে নিয়ে ক্লাসে ফিরতে ছুটিতে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনকে গুলি করার ঘটনায় ক্লাস বর্জন করা শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার ক্লাসে ফিরেছেন। তবে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা সাত দিনের ছুটিতে গেছেন। সহপাঠী আরাফাত আমিন পুরোপুরি সুস্থ হলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাসে ফিরতে চান তাঁরা।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী আজ বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বলেছেন, অভিযুক্ত সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একদিকে তাঁকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন, অন্যদিকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন

আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, আজ সকাল থেকে কলেজের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা যথারীতি আবার ক্লাসে ফিরেছেন। শুধু তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাত দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে।

কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে সহপাঠীর ওপর এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত ও ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি। তাই মনটাকে একটু ভালো করে আহত সহপাঠীকে সুস্থ করে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। এ জন্য সবাই মিলে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেছিলাম। তিনি সেটি মঞ্জুর করেছেন।’

কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসক মোহাম্মদ রাহাত বলেন, ‘আমরা গত সোমবার থেকেই ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছিলাম। স্যারদের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছি। স্যাররাও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষক রায়হান শরীফকে বরখাস্ত করায় আমরা ক্লাস বর্জনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরেছি। তবে ওই শিক্ষকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পোস্টারিং, সভা–সেমিনারসহ অন্যান্য আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

আরও পড়ুন

গুলিবিদ্ধ আরাফাত আমিন এখনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সহপাঠী মাসুম বিল্লাহ, জাহীন শাহরিয়ার ও তাহ্ফিমা আক্তার বলেন, বর্তমানে আহত আরাফাত আমিনের অবস্থা অনেকটাই ভালো, তবে পায়ে একটু ব্যথা আছে। মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন তিনি। সাত দিনের ছুটির পর তাঁকে সঙ্গে নিয়েই ক্লাসে ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।

সোমবার বিকেলে মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনকে গুলি করেন শিক্ষক রায়হান শরীফ। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে রায়হানের হেফাজত থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, রায়হানের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটির বাদী গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল্লাহ আল আমিন। তিনি ছেলেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এনেছেন। এই মামলায় সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক বিল্লাল হোসেনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রায়হান শরীফ।

অপর মামলাটি করেন সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের এই মামলায় গতকাল রায়হান শরীফের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। ১১ মার্চ এ রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন