বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে শাহরিয়ারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

আজ সকাল আটটার দিকে পরিবারের কাছে শাহরিয়ারের লাশ হস্তান্তর করে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। সকাল নয়টায় জানাজা শেষে শাহরিয়ারের বাড়ির উদ্দেশে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স রওনা হয়েছে। সঙ্গে শাহরিয়ারের সহপাঠীরা দুই বাসে করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে রাজশাহী মেডিকেলে ভাঙচুর

এর আগে গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে রাবির মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয়তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। হবিবুর রহমান হলেন ৩৫৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত জানাজায় পরিবারের পক্ষ থেকে শাহরিয়ারের দুই ভাই অংশ নেন। আজ ভোররাতে তাঁরা রাজশাহীতে পৌঁছান। জানাজায় শাহরিয়ারের বড়ভাই শাকিল বলেন, ভাইকে হারিয়ে পরিবারের সবাই মর্মাহত। বাদ আসর গ্রামের বাড়িতে শাহরিয়ারের দ্বিতীয় জানাজা হবে।

জানাজা শেষে শাহরিয়ারের বাড়ির উদ্দেশে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স রওনা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

জানাজা শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, তাঁরা এ ঘটনায় মর্মাহত। তাঁদের একজন সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী চলে গেলেন। গতকাল রাতে শাহরিয়ারের দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আলাদা তদন্ত কমিটি হবে।

গতকাল রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সহপাঠী চিকিৎসার অবহেলায় মারা যাওয়ায় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ওই সময় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আনসার সদস্যরা তাঁদের মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা হাসপাতালের গাছের টব ভাঙেন। এ ঘটনায় পরে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে হাসপাতালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে রাবি শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।

নিহত শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ার
ছবি: ফেসবুক থেকে

গতকাল রাতে হাসপাতালে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, তাঁরা শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর জরুরিভাবে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিউ) নিতে বলেন। কিন্তু হাসপাতালে জরুরি বিভাগে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বলেন, চিকিৎসকের রেফারেন্স লাগবে। পরে ওই শিক্ষার্থী সেখানেই মারা যান।

অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সভাপতি শাহাদাতুন নুর লাকী প্রথম আলোকে বলেন, ওই রোগী আসার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আসলে উনি আগেই মারা গিয়েছিলেন। এ অবস্থায় ‘ডাক্তার কই, ডাক্তার কই’ করে যখন ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে পড়েন, তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভয় পেয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। পরে ওই সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রতিনিধি রয়েছেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আশ্বাসে গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে ক্যাম্পাসে ফিরলেন শিক্ষার্থীরা