আদালতে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনকে ‘মনগড়া’ দাবি করে বাদীর নারাজি

আদালত
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে পুলিশের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন ‘মনগড়া ও পক্ষপাতমূলক’ দাবি করে নারাজি দিয়েছেন মামলার বাদী। ১০ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দেন ভুক্তভোগী তরুণী। ২৮ আগস্ট ওই নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি হবে।

এর আগে ২৫ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নাছির উদ্দিন মজুমদার। প্রতিবেদনে মামলার আসামি ফিরোজ আহমদ (৪৭), রাসেল উদ্দিন (৩৮), মো. শরীফ (৪৮) ও নুরুল ইসলামকে (৪৮) অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। ১৫ মার্চ ওই চার আসামির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন ওই তরুণী।

আরও পড়ুন

মামলার বাদী প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যাননি। সাক্ষী ও ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ না করেই তিনি আদালতে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনি আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বেশ কয়েকবার তাঁকে (বাদী) আপস করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন মজুমদার সম্প্রতি টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে গেছেন। এ বিষয়ে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, পুলিশ সাক্ষ্যপ্রমাণ, জবানবন্দি ও ঘটনার পারিপার্শ্বিক সবকিছু বিবেচনা করেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্ত করে বাদীর অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। বিশেষ করে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রধান আসামি ফিরোজ বাদীর স্বামী ছিলেন, সেটা তিনি এজাহারে গোপন করেন। আসামিদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

আরও পড়ুন

আদালতে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার প্রধান আসামি ফিরোজ বাদীর স্বামী। ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের মনোমালিন্য চলছিল। মামলার অন্য আসামিরা ফিরোজের বন্ধু ও নিকটাত্মীয়। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন রাসেল, শরীফ ও নুরুল। তদন্তকালে সাক্ষ্যপ্রমাণ, সিসিটিভি ফুটেজ, ডাক্তারি পরীক্ষা বিশ্লেষণ করে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। এলাকার কুচক্রী মহলের পরামর্শে স্বামী ও তাঁর বন্ধুদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করেন বাদী। অভিযোগের সপক্ষে বাদি কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি।

বাদীর নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিজের কার্যালয়ে বসেই ইচ্ছেমতো জবানবন্দি নেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে। আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদন বাতিল করে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ কিংবা অন্য কোনো সংস্থাকে তদন্তভার দিতে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

আরও পড়ুন

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার থেকে জানা গেছে, ফিরোজ, শরীফসহ কয়েকজন ১৫ মার্চ কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ওই তরুণীর হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে কক্সবাজার ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন (বাহারছড়া) ফজল কাদেরের বাড়িতে নিয়ে যান। ফজল কাদের সম্পর্কে ফিরোজের আত্মীয়। ওই বাড়ির একটি কক্ষে আটকে প্রথমে ফিরোজ ও শরীফ তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে নুরুল ও রাসেল ধর্ষণ করেন। দলবদ্ধ ধর্ষণের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। তখন রাসেল ও শরীফ ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এ দৃশ্য দেখে এক ব্যক্তি জরুরি সেবা নম্বরে ফোন দিলে আসামিরা পালিয়ে যান। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, গত বছর বর্ষায় তাঁর বাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তখন ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুর্বৃত্তরা তাঁকে জখম করে। ওই ঘটনায় মামলা করলে মোরশেদ নামের এক ডাকাত আত্মসমর্পণ করেন। ১৫ মার্চ মামলার ধার্য তারিখ ছিল। ওই মামলার করণীয় জানতে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে গিয়ে তিনি দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।