বগুড়ায় সবজির মোকামে ধস, চাষিদের মাথায় হাত

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের প্রভাবে বগুড়ায় সবজির দামে ধস নেমেছে। বুধবার সকালে বগুড়ার সবজি মোকাম মহাস্থান হাটে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার সবজির বড় মোকাম মহাস্থান হাট বুধবার আগাম শীতকালীন সবজিতে ঠাসা ছিল। হাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সবখানেই সবজিতে ভরপুর। সাতসকালে খেত থেকে সবজি তুলে হাটে আনেন চাষিরা। ক্রেতা-বিক্রেতা আর আড়তদারদের ভিড় ছিল নিত্যদিনের মতো। কিন্তু ছিল না সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম।

দুই দিন আগে মহাস্থান হাটে যে ফুলকপির পাইকারি দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, আজ সেই ফুলকপির দাম ৩০ টাকায় নেমে এসেছে। ৪০ টাকা কেজির মুলা ১৫ টাকা এবং ৪০ টাকার বেগুন ৩০ টাকায় নেমেছে। এভাবে বাঁধাকপি, বরবটি, পেঁপে, শসা, শিম, কাঁচা মরিচসহ সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। কোনো কোনো সবজির কয়েকগুণ দাম পড়ে গেছে।

অবরোধের আগে সোমবার মহাস্থান হাটে প্রতি মণ ফুলকপি ২ হাজার, মুলা ১ হাজার ৬০০, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩৫, শসা প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০, ছাচি লাউ প্রতিটি ৩৫, ঝিঙে প্রতি মণ ১ হাজার ৮০০, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০, পেঁপে প্রতি মণ ৮০০ টাকা, বেগুন প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা চলমান তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। জামায়াতে ইসলামীও তিন দিন অবরোধ ডেকেছে। সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোও কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে। অবরোধে মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে কম। বেশ কয়েকটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।

বাজারে আগাম শীতকালীন সবজির রেকর্ড সরবরাহ থাকলেও অবরোধের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন মোকামে সবজি পাঠাতে ট্রাকের ভাড়া ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে ব্যাপারী ও আড়তদারেরা গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে সস্তায় সবজি কিনছেন। সবজির দামে ধস নামায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

আরও পড়ুন
বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির আগে ৪০ টাকা কেজির মুলা ১৫ টাকায় নেমে এসেছে। বুধবার সকালে বগুড়ার সবজি মোকাম মহাস্থান হাটে
ছবি: প্রথম আলো

শিবগঞ্জের ঘাগুরদুয়ারের কৃষক দিলবর রহমান বলেন, ২০ শতক জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে দাম মোটামুটি ভালোই পাচ্ছিলেন। কিন্তু আজ হাটে এসে দেখেন, দাম অনেক কমে গেছে। দুই দিন আগে যে ফুলকপি প্রতি কেজি ৫৬ টাকায় বিক্রি করেছেন, আজ তা ৩০ টাকায় নেমে এসেছে। দিলবর রহমানের মতো একই দশা হাজারো চাষির। উৎপাদন ভালো হলেও অবরোধের কারণে পাইকারেরা তাঁদের কাছ থেকে সস্তায় সবজি কিনছেন বলে কয়েকজন চাষি জানান।

অন্যদিকে মহাস্থান বাজারের আড়তদার মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধের কারণে সবজি কেনায় আগ্রহ ছিল না ব্যবসায়ীদের। অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে সবজি কিনলেও মোকামে পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

আরও পড়ুন

বুধবার সকালে মহাস্থান হাটে গিয়ে দেখা গেল শুধু সবজি আর সবজি। খেত থেকে সবজি নিয়ে হাটে ক্রেতার আশায় বসে আছেন চাষিরা। আড়তদার ও ফড়িয়ারা অনেকটা পানির দামে সবজি কিনছেন। অনেক চাষি কম দামে সবজি বিক্রি করে বিষণ্ন মনে বাড়িতে ফিরছেন।

ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাস্থান পাইকারি মোকামে আজ প্রতি মণ ফুলকপি ১ হাজার ২০০, মুলা ৬০০, বাঁধাকপি প্রতিটি ২০ থেকে ২২, শসা প্রতি মণ ৬০০, ছাচি লাউ প্রতিটি ২০, ঝিঙে প্রতি মণ ১ হাজার ২০০, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১০০, পেঁপে প্রতি মণ ৪০০, বেগুন ১ হাজার ২০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট মোকামে পাঠাতে সবজি বস্তায় ভরছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার সকালে বগুড়ার সবজি মোকাম মহাস্থান হাটে
ছবি: প্রথম আলো

অবরোধের আগে গত সোমবার মহাস্থান হাটে প্রতি মণ ফুলকপি ২ হাজার, মুলা ১ হাজার ৬০০, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩৫, শসা প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০, ছাচি লাউ প্রতিটি ৩৫, ঝিঙে প্রতি মণ ১ হাজার ৮০০, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০, পেঁপে প্রতি মণ ৮০০ টাকা, বেগুন প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল।

রায়মাঝিড়া গ্রামের কৃষক জাফর আলী বলেন, ‘বিয়ানবেলা খেতত থ্যাকে ৫ মণ ফুলকপি তুলে হাটত লিয়্যাচ্চি। ইটি অ্যাসে দেখি সবজি কিনবার লোক নাই। সোমবার এক কেজি ফুলকপি বেঁচে ৪৫ টেকা পাচনো। আজকা পানো ৩০ টেকা।’ সবজিচাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের ফাঁদত কৃষক মরিচ্চে। আর লেতারা কেউ গদির জন্যি আন্দোলন করিচ্চে, কেউ গায়ের জোরে গদি রক্ষা করিচ্চে। ইংকা করে হরতাল-অবরোধ হলে খ্যাতের সবজি খ্যাতত পচে যাবি, কিনবার লোক পাওয়া যাবি না।’

মহাস্থান হাট সবজি, কাঁচা ও পাকা মাল ব্যবসায়ী এবং আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, অবরোধের প্রথম দিনে খেত থেকে সবজি তুলে হাটে এনে দাম না পেয়ে অনেক কৃষক কেঁদেছেন। কৃষকের কষ্টের কথা বিবেচনা করে ঝুঁকি নিয়ে আড়তদারেরা কিছু সবজি কিনেছেন। এখন কেনা সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট মোকামে পাঠাতে ট্রাকভাড়া গড়ে ১০ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। ঢাকার ট্রাকভাড়া ছিল ২০ হাজার। অবরোধের কারণে এখন ৩০ হাজার হয়ে গেছে। অবরোধের কারণে ঝুঁকি নিয়ে কেউ পণ্য পরিবহন করতে চাইছেন না।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কৃষক সবজি ও ধান চাষ করে ন্যায্য দাম পান না। কৃষিপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। ১৮ কোটি মানুষই এখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাইছেন। অবরোধের সময় খেতের সবজি খেতে থাকলেও সমস্যা হবে না, অবরোধের পর বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষকের আক্ষেপ নেই বলে তিনি মনে করেন।