বিএনপি নেতা পিন্টুর মৃত্যুর ৯ বছর পর হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুর ঘটনার ৯ বছর পর রাজশাহীর আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার আবেদনে আসামি হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আরজিতে ১ থেকে ২৬ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহযোগিতায় নাসির উদ্দিন পিন্টুকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু (৫০) রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। আদালতে তাঁর পক্ষে আইনজীবী আবদুল মালেক রানা মামলার আবেদন উপস্থাপন করেন।
আসামির তালিকায় অন্যদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসাদুজ্জামান খান ও আনিসুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম, সোলায়মান সেলিম, ইরফান সেলিম, মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনির ও এ এস শরিফ উদ্দিন ওরফে ব্ল্যাক শরিফ। এ ছাড়া তৎকালীন আইজিপি, তৎকালীন আইজি প্রিজন, ঢাকা ও রাজশাহীর তৎকালীন ডিআইজি প্রিজন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার শাহাদত হোসেন, কারা চিকিৎসক আবু সায়েম, কয়েদি রাব্বানী ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের নাম রয়েছে তালিকায়।
ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার তৎকালীন লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর আসন (সীমানা পরিবর্তনের আগে) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসির উদ্দিন পিন্টু। পরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। এ ছাড়া একটি অস্ত্র লুটের দায়ে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। তবে আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। নির্বাচন করতে পারেননি। ওই নির্বাচনের আগে আগে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে পিন্টুকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কয়েক দিন পর তিনি অসুস্থ বোধ করলে ২৬ এপ্রিল তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর তাঁকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়। পরে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিঠি দিয়ে কারাগারেই চিকিৎসক ডাকা হয়। চিঠি পেয়ে একজন চিকিৎসক গেলেও তাঁকে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালের ৩ মে দুপুরে কারাগার থেকে পিন্টুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ কারণে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩–এর ৭(১) ধারামতে আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়েছে।
নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু বলেন, ‘আমার ভাইয়ের জনপ্রিয়তা ও বিএনপিতে তাঁর অবদানকে ভয় পাচ্ছিল হাসিনা সরকার। তাই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে পিলখানা মামলায় ফাঁসিয়ে সাজা দেওয়া হয়। এরপর কারাগারে নিয়ে হত্যা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের কারণে আমার ভাই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ আই হসপিটালে নিজ খরচে তাঁর নিয়মিত চিকিৎসা চলবে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে তাঁকে ঢাকায় না রেখে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ এবং পরে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তাঁর চিকিৎসা না করে সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়।’
নাসিম আহমেদ রিন্টুর আইনজীবী আবদুল মালেক রানা বলেন, ‘আদালতে মামলার আরজি জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত বক্তব্য শুনেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আদালত কোনো আদেশ দেননি। আজই বিকেলে কিংবা পরে আদালত আদেশ দিতে পারেন। তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এটি কোনো তদন্ত সংস্থার কাছে পাঠানো হতে পারে।’
আদালতে মামলার আবেদন করার সময় বাদীর সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হকসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা গিয়েছিলেন।