প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি আ.লীগ নেতা হাবিবের

নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে সোমবার অপহরণ করা হয়ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে তুলে এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করা হয়েছিল। ওই মাইক্রোবাসটির মালিক লুৎফুল হাবীব নির্বাচনে তাঁর (দেলোয়ার) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তবে ঘটনার তিন দিন পরও পুলিশ মাইক্রোবাসটি আটক করতে পারেনি।

সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে সিংড়া উপজেলার অন্তত তিনজন সাংবাদিক ও একজন গাড়িচালক ওই মাইক্রোবাস লুৎফুল হাবীবের বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থাকায় তাঁরা নাম প্রকাশ করতে চাননি।

আরও পড়ুন

লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি মাইক্রোবাসটির মালিক বলে স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সেটি তিনি ভাড়ায় খাটান। অপহরণের কাজে মাইক্রোবাসটি ব্যবহার হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না।

এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে লুৎফুল হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে আমি মাইক্রোবাসটির হদিস পাচ্ছি না। চালকের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না। এ ব্যাপারে আমি জিডি করব।’

আরও পড়ুন

তিন দিনেও মাইক্রোবাসটি আটক হয়নি

এদিকে আলোচিত মাইক্রোবাসটি তিন দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ। গাড়িটির নিবন্ধন নম্বর ও মালিকানার তথ্য পুলিশের কাছে আছে বলে দাবি করা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে আজ বুধবার সকালে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িটি যিনি চালাচ্ছিলেন তাঁকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁর নাম সুজন। ভিডিও ফুটেজ থেকে গাড়িটির যে নিবন্ধন নম্বর পাওয়া গেছে, তা বিআরটিএতে পাঠানো হয়েছিল। বিআরটিএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরবরাহ করা নিবন্ধন নম্বরটি ভুল। তাই মালিকানার তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘অনেক সময় ভিডিওর অস্পষ্টতার কারণে ভুল নম্বর আসতে পারে। তাই আমরা গাড়িটি আটক করার চেষ্টা করছি। ঘটনার পর থেকে গাড়িটি জনসমক্ষে বের হয়নি। গাড়িটি আটক করার পর বিস্তারিত জানানো হবে।’  

গত সোমবার বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায়। ওই ঘটনায় জড়িত অন্তত ১৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তাঁদের শনাক্ত করেছেন। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও গাড়িচালকও রয়েছেন। তবে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি।

আরও পড়ুন