আদালতের পর্যবেক্ষণ: নিজেদের রক্ষা করতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফের ১০১ জন ইয়াবা গডফাদার

রায় ঘোষণার পর কক্সবাজার আদালত থেকে টেকনাফের আলোচিত মাদক ও অস্ত্র মামলার ১৮ আসামিকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে দেড় বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া ১০১ জন মাদক কারবারির বিষয়ে রায়ে আদালতের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, আসামিরা আত্মস্বীকৃত অপরাধী তথা অবৈধ মাদক ব্যবসায় জড়িত কিংবা মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে এই আসামিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান, ধারাবাহিক অভিযান, পুলিশ প্রশাসনের চাপ, পুলিশ প্রশাসনের কৌশলগত পদক্ষেপ এবং সরকারের আনুকূল্যে নিজেদের রক্ষা করার অভিপ্রায়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।

আরও পড়ুন

ঘটনার প্রেক্ষাপট, সাক্ষ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে আদালতের প্রতীয়মান হয়েছে যে এই মামলার আসামিরা এজাহারে বর্ণিত ঘটনার তারিখের (২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি) কয়েক দিন আগে থেকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার এসে পুলিশের কাছে হাজির হন। কক্সবাজার জেলা পুলিশ আসামিদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখে। অতঃপর আসামিদের প্রকাশ্যে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্বঘোষণা মোতাবেক বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে কক্সবাজার পুলিশ লাইনস থেকে পুলিশ পাহারায় বাসযোগে টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠের জনসভায় নেওয়া হয়। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, ডিআইজি, সংসদ সদস্যসহ হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসামিদের হাতে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এবং আসামিদের সেখান থেকে টেকনাফ থানায় নিয়ে দুটি মামলা করা হয়।

আরও পড়ুন
সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর, আবদুল আমিন, মো. ফয়সাল ও শফিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে ওই দুটি মামলার রায় দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। মাদক মামলার রায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত টেকনাফের ১০১ জন ইয়াবা গডফাদারকে দেড় বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে অস্ত্র মামলার রায়ে ওই ১০১ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন ১৮ জন আসামি। ৮৩ আসামি পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর, আবদুল আমিন ওরফে আমিনুল ইসলাম, মো. ফয়সাল, শফিকুল ইসলাম, চাচাতো ভাই মো. আলম, খালাতো ভাই মং মং সিং, ফুপাতো ভাই কামরুল ইসলাম, ভাগনে সাহেদুর রহমান নিপুসহ অন্তত ১২ জন নিকটাত্মীয়।

আরও পড়ুন

আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, আসামিরা আত্মস্বীকৃত অপরাধী তথা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আসামিরা অবৈধ মাদক ব্যবসায় জড়িত কিংবা মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁরা নিজেদের রক্ষা করার অভিপ্রায়ে আত্মসমর্পণ করেছেন মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এই আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ কিংবা বেকসুর খালাস প্রদান করা হলে সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে। তাই এই আসামিদের প্রত্যেককে দৃষ্টান্তস্বরূপ নামমাত্র কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা ন্যায়সংগত এবং যুক্তিসংগত মর্মে আদালত মনে করেন।

আরও পড়ুন