‘কে জানত এটাই শেষ দেখা, ছেলেকে আর দেখব না’

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় শনিবার রাতে তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের রসকাঠি এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় নিহত ৯ বছরের শিশু ফারিয়ান সরকারের মা শান্তা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল দুপুরে সিরাজদিখানের লতব্দী ইউনিয়নে
ছবি: সাজিদ হোসেন

‘যখন ট্রলার ডুবছিল, তখন ছেলের দুই হাত চেপে ধরে ছিলাম। চিৎকার করছিলাম বাঁচার জন্য। মুহূর্তেই পানির নিচে ডুবে যাই। ছেলেকে নিয়ে ওপরে উঠতে চেষ্টা করি। মাথার ওপর ট্রলারের ত্রিপলে আটকে যাই। হাত দিয়ে ত্রিপল ছেঁড়ার সময় ছেলেকে হারিয়ে ফেলি।’

কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা শান্তা আক্তার। লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে শনিবার রাতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া পিকনিকের সেই ট্রলারে ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে ফারিয়ান সরকার। ছেলেটি মারা গেছে।

শান্তা আক্তার বলেন, ‘পানিতে ডুব দিয়ে ছেলেকে খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। আমার কলিজা আমায় ছেড়ে হারিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা দিন পদ্মায় ঘোরাঘুরি করেছি। ছেলেটা খুব আনন্দে ছিল। ছেলেটার মায়াভরা মুখটা দেখছিলাম। কে জানত এটাই শেষ দেখা। আমার ছেলেকে আর দেখব না।’

শুধু শান্তা আক্তার নন, এভাবে বিলাপ করছেন খিদিরপুর গ্রামের নিহত সাতজনের পরিবারের স্বজনেরা। সিরাজদিখান উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মারা যাওয়া সাতজন হলেন মোকছেদা বেগম (৪০), এপি আক্তার (২৮) ও তাঁর বোন পপি আক্তার (৩০), পপির দুই ছেলে সাকিবুল (১০) ও সজিবুল (৪), শাহনাজ হুমায়রা (৫ মাস) ও ফারিয়ান (৮)। ট্রলারে যাত্রী ছিলেন নারী-শিশুসহ ৪৬ জন।

আরও পড়ুন

গতকাল রোববার শাহনাজ হুমায়রাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে মাতম। এ সময় হুমায়রার বাবা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী হুমায়রাকে নিয়ে পিকনিকে গিয়েছিলাম। সারা দিন মেয়েকে আমার কোলে রেখেছিলাম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ওর মায়ের কোলে রেখে আমি পাশে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলাম। মুহূর্তেই বিকট শব্দ হলো। আমি মেয়েকে আমার কোলে নিই। একপর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে যাই। স্থানীয় মানুষজন এসে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করে। জ্ঞান ফিরে মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করেছি। কোথাও পাইনি। কিছুক্ষণ পর আমার মেয়ের নিথর দেহ পানিতে ভেসে উঠেছে।’

আরও পড়ুন

মৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরা আক্ষেপ করে বললেন, রাতে নদীতে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ। এরপরেও নদীতে বাল্কহেড চলাচল করছে। ঠিকঠাক নজরদারি হলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা ঘটত না।

এদিকে দুর্ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তিনটি শিশু নিখোঁজ। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ শিশুরা হলো কয়ড়া খোলা গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আরিফ হোসেনের ছেলে তুরান (৮) ও মেয়ে নাভা (৫)। খিদিরপুর গ্রামের রুবেল শেখের ছেলে মাহির (৪)। মৃত এপি ও পপি রুবেল শেখের বোন।

আরও পড়ুন