পাগলা মসজিদে ৭ ঘণ্টার হিসাবে পাওয়া গেল ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, গণনা চলবে রাত পর্যন্ত

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকের টাকা গণনার কাজ করছে মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত কর্মী এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় আড়াই শ লোক। আজ শনিবার সকালে জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরের মসজিদ প্রাঙ্গণেছবি: তাফসিলুল আজিজ

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে আজ শনিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত গণনায় ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। টাকা গণনা এখনো চলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ প্রথম আলোকে বলেন, এবার অন্যবারের তুলনায় টাকা বেশি হবে। তাই গণনার কাজ শেষ হতে রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বাজতে পারে।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাগলা মসজিদের ৯টি দানসিন্দুক ও ১টি বড় স্টিলের ট্রাংক ৪ মাস ১০ দিন পর খুলে ২৭ বস্তা টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই মসজিদে আছে ৯টি লোহার সিন্দুক। তবে এবার রোজা ও ঈদের কারণে সিন্দুকগুলো আগেই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সপ্তাহ দুয়েক আগে দুটি সিন্দুকের সমান আকারের আরও একটি স্টিলের ট্রাংক যোগ করা হয়।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পরপর দানসিন্দুক খুললেও এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে কিছুটা দেরিতে, অর্থাৎ ৪ মাস ১০ দিন পর খোলা হয়েছে। তাই এবার সর্বোচ্চ ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন ২৩ বস্তার মধ্যে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া গিয়েছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অসংখ্য মানুষ টাকা ছাড়াও পাগলা মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বলে জানায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের উপস্থিতিতে দানসিন্দুক ও ট্রাংক খোলা হয়। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্দুক ও ট্রাংক থেকে ২৭টি বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢালা হয়। বেলা ১১টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় গণনার কাজ চলছিল। মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত কর্মী এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় আড়াই শ লোক টাকা গণনা করছেন। গণনা শেষে মোট টাকার পরিমাণ জানানো হবে।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি বড় আকারের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তাতে মসজিদ-মাদ্রাসা মিলিয়ে অর্ধলাখ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারবেন। একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। সেটির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশলীদের। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই আগামী মাস থেকে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।