তেঁতুলিয়ায় তাণ্ডব চালানো বন্য হাতি দুটি ফিরে গেল ভারতে

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্তে একটি ভূট্টাখেতে দুটি বন্য হাতি অবস্থান করছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায়ছবি: প্রথম আলো

ভারত থেকে আসা দুটি বন্য হাতি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় তাণ্ডব চালানোর পর সীমান্ত পেরিয়ে আবার ভারতে ফিরে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকা থেকে ৪৪৮ নম্বর সীমান্ত পিলার দিয়ে মহানন্দা নদী পার হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার গেট ভেঙে হাতি দুটি ভারতের ফাঁসিদেয়া বিএসএফ ক্যাম্প–সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের নির্দেশনা মেনে অনুপ্রবেশ করা হাতি দুটি ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে ভারতের বিশষজ্ঞ দলকে বাংলাদেশে আসতে হয়নি। বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয় লোকজনের প্রচেষ্টায় রাতে আগুন জ্বালিয়ে ও বিকট আওয়াজ তৈরি করে হাতি দুটিকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এ সময় ওপারে ভারতের বন বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দলসহ বিএসএফের সদস্যরা দুটি গেট (২০ ও ২১ নম্বর) খুলে রেখেছিলেন। কিন্তু হাতি দুটি খোলা গেট দিয়ে না গিয়ে অন্য পাশের কাঁটাতারের একটি গেট ভেঙে ভারতে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে দেশের বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আর হাতির আক্রমণে মারা যাওয়া তরুণের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে বন্য হাতি দুটি তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার ৭৩৫ নম্বর মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাব–পিলার এলাকা দিয়ে ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার গেট ভেঙে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে হাতি দুটি তিরনইহাট ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকা দিয়ে সকাল সাতটার পর বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকায় মহানন্দা নদী–সংলগ্ন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির একটি ভুট্টাখেতে অবস্থান নেয়। সেখানে আসার সময় তীরনইহাট ইউনিয়নের দৌলতপাড়া এলাকার হাতি দুটির আক্রমণে সামিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির একটি গরু আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন গরুটি জবাই করেন।

আরও পড়ুন

পরে হাতে দুটি দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে জামাল ও শমসের আলী নামের দুই ব্যক্তির বাড়িঘর ভাঙচুর করে পাশের ভুট্টাখেতে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মানুষকে হাতির কাছাকাছি যেতে নিষেধ করে সতর্ক থাকতে মাইকিং করে। সেই সঙ্গে হাতি দুটিকে ভারতে ফেরত পাঠানোর তৎপরতা চালানো হয়।

গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে হাতি দুটি ভুট্টাখেত থেকে বেরিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। এ সময় হাতি দেখতে যাওয়া লোকজন পালিয়ে গেলেও নুরুজ্জামান (২৩) নামের এক বাক্‌ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণকে হাতিগুলো আক্রমণ করে। এতে তিনি গুরুতর হন। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। অবস্থার অবনতি হলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতির সময় তিনি মারা যান।

আজ বেলা ১১টায় জানাজা শেষে হাতিগুলোর আক্রমণে মারা যাওয়া তরুণকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন।

আরও পড়ুন