রংপুর মেডিকেলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতি, সেবা কার্যক্রম ব্যাহত

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালছবি: প্রথম আলো

বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি পঞ্চম দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজে গত রোববার থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

এ দিকে, মধ্যস্তরের চিকিৎসকদের দিয়ে পালাক্রমে সেবা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। মধ্যস্তরের চিকিৎসকেরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যান্য চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।

শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা মাসিক ভাতা ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, গত বছর তাঁরা মাসিক বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তখন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেতন–ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় তাঁরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।

এ সম্পর্কে জানতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ রংপুরের আহ্বায়ক চিকিৎসক রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, চিকিৎসক সুরক্ষা আইন ও চিকিৎসকদের কর্মস্থল নিরাপদের দাবিতে পরিচালককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি।

আরও পড়ুন

হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে আড়াই গুণেরও বেশি রোগী সব সময় ভর্তি থাকে। বর্তমানে রমজান মাস হওয়ায় কিছুটা রোগী কম রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রোগী ভর্তি রয়েছে ১হাজার ৯০০। হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রয়েছেন ১৫০ জন।

আজ সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টা হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোনো শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নেই। সেবা পেতে রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি। অনেক রোগীকে মেঝেয় রাখা হয়েছে।

মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন জানান, গত মঙ্গলবার রোগীকে ভর্তি করেছেন। দিনের বেলা সকালে চিকিৎসক আসেন। দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত নার্সরাই একমাত্র ভরসা।

অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান ওয়ার্ডে কর্তব্যরত অবস্থায় বলেন, ‘ইন্টার্নিদের অনুপস্থিতিতে অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমাদের বিভাগের মিড-লেভেল (মধ্যস্তর) চিকিৎসক বেশি। সেবার ত্রুটি করা হচ্ছে না।’

মেডিসিন বিভাগের দুটি ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি। শয্যার চেয়ে প্রায় দিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে নার্স ও পালাক্রমে চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। মেডিসিন (পুরুষ) ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স পলি বেগম বলেন, চিকিৎসাসেবার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। চিকিৎসকেরা সকাল থেকেই থাকছেন।