সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে আলামত, তদন্ত কমিটি চিঠিই পায়নি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ভবনের ধসে পড়া সাটারিং সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায়ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ১০ তলা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান আবাসিক হলের একটি অংশ ধসে পড়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি। ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি করা হলেও আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কমিটির আহ্বায়কের কাছে চিঠি পৌঁছায়নি।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই ধসে পড়া ভবনের সাটারিং, রডসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। এতে ধসে পড়া অংশের আলামত নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। গতকাল বুধবার বিকেলে ভবনধস কেন ঘটল, তার বিবরণসহ সাইট ইঞ্জিনিয়ার, প্রধান প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

আজ সকালে নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ধসে পড়া ভবনের অংশের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। গতকাল বুধবারও সারা দিনই শ্রমিকেরা এই কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। ভবনের অন্য অংশে কাজ চলছে। সেখানে থাকা শ্রমিকেরা বলেন, ধসে যাওয়া অংশে আবার কাজ শুরু হবে। এ কারণে তাঁরা এগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন।

ওই নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, দুই দিন ধরে তিনি এখানে আছেন। ধসে পড়া ভবনের অংশ দেখতে কেউ আসেননি। তবে তিনি শুনেছে, তদন্ত করতে আসতে পারে।

এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠনগুলোও বিবৃতি দিয়ে বলছে, ধসে পড়া ভবনের বাকি কাঠামোর স্থায়িত্ব, রডসহ অন্য নির্মাণসামগ্রীর উপযুক্ততা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। অনিরাপদ কাঠামো ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা বয়ে আনবে। তাই নতুন করে কাজ শুরু করার আগে অবিলম্বে নিরপেক্ষ প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ দ্বারা ভবনটির মান যাচাই করতে হবে। ভবনধস ও ধারাবাহিক ছাত্র-শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের নামে মামলা এবং তাদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের মূল ভবনের সামনে পূর্ব পাশে করা ভবন ধসে পড়ে। এ ঘটনায় নয়জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখনো দুই শ্রমিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেদিন রাত আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ শেষ করে। ওই দিন রাতেই এক জরুরি সভা ডেকে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।

আরও পড়ুন

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান সরকারকে। সদস্য দুজন হলেন গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ইমরুল হাসান।

কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠনের দুই দিনের পরও চিঠি পৌঁছায়নি কমিটির আহ্বায়কের কাছে। কমিটির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে, এটা তিনি শুনেছেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাননি। চিঠি পেলেই কাজ শুরু করবেন। ধসে পড়া অংশে শ্রমিকেরা মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন, এতে আলামত নষ্ট হচ্ছে কি না—এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্পের জন্য পাস হয় ৩৬৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা হল, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল, ১০ তলা ভবনবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০ তলা একাডেমিক ভবন, নালা নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আনুষঙ্গিক খরচের দিক বিবেচনায় প্রকল্পের সংশোধিত বাজেট পাস হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৯ সালে ৫১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে ১০ তলাবিশিষ্ট শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান আবাসিক হল ও ২০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায় রূপপুরের ‘বালিশ–কাণ্ডের’ আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।

আরও পড়ুন

এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজটি পেল, সে ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক খোন্দকার শাহরিয়ার আলম বলেন, ই-টেন্ডারের মাধ্যমে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পায়। এ নিয়ে তাঁদের কিছুই করার ছিল না। তারা নিয়ম অনুযায়ীই কাজ পেয়েছে।