আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীকে নোটিশ
শরীয়তপুর-১ ও ২ আসনের আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ওই দুই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ওই দুই প্রার্থীর কাছে এ ব্যাপারে দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল হোসেনকে বিভিন্ন স্থাপনায় লাগানো রঙিন পোস্টার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক শামীমকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে সশরীর হাজির হয়ে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর-১ আসনে ইকবাল হোসেন ছাড়া আরও চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি দায়িত্ব পালনের সময় দেখেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল হোসেনের নাম ও ছবি ব্যবহার করে শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলার চিকন্দী, মনোহর বাজার, লাউখোলা, পালের চর, কাজীরহাট এলাকার বিভিন্ন ভবন, দোকান, গাছ, পিলার, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ বিভিন্ন স্থাপনায় রঙিন পোস্টার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন প্রভৃতি লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২৫টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে কাজীরহাট এলাকায় তিনটি তোরণ নির্মাণাধীন। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এর ১২ বিধি অনুসারে, ভোট গ্রহণের তারিখ থেকে ৩ সপ্তাহ পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ নেই। এ ছাড়া রঙিন পোস্টার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন প্রভৃতি লাগানো এবং তোরণ নির্মাণ ওই বিধিমালার ৭ (১) (ক) ও (খ) এবং ১০ (ক) নম্বর বিধির গুরুতর লঙ্ঘন। অনতিবিলম্বে এসব প্রচারসামগ্রী অপসারণের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি যুগ্ম জেলা জজ ইলিয়াস রহমান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। আচরণবিধির প্রতি সম্মান দেখিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যেই সব অপসারণ করা সম্ভব হবে।’
শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। সেই সঙ্গে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ শওকত আলী। এ ছাড়া আরও আট প্রার্থী এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
খালেদ শওকত আলী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন, ৭ ডিসেম্বর নড়িয়ার রাজনগর ইউনিয়নের হাঁসেরকান্দি এলাকায় এনামুল হক শামীম ৩০০–৪০০ লোক নিয়ে নির্বাচনী জনসভা করেছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ঘটনাটি তদন্ত করেছে। এ ব্যাপারে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি সিনিয়র সহকারী জজ আরিফুল ইসলাম গতকাল এনামুল হক শামীমকে নোটিশ দিয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁকে সশরীর হাজির হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এনামুল হক শামীম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো নির্বাচনী সভা বা সমাবেশ করিনি। বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াওয়ের প্রতিবাদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ছিল। নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে ওই কর্মসূচিতে গিয়েছিলাম। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা–ও করতে পারিনি। আমাকে হেয় করার জন্য ও আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’