জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আগে হামলা করেন, দাবি স্বপ্নপুরীর কর্মচারীদের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এই আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে নবাবগঞ্জ থানায়
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীর কর্মচারীরা দাবি করেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আগে তাঁদের মারধর করেছেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে একজনকে মারতে মারতে বিনোদনকেন্দ্রের প্রধান ফটকে নিয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে ওই বিনোদনকেন্দ্র থেকে এক নারীসহ আট কর্মচারীকে আটক করা হয়। পরে গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনামিকা আক্তারের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষের দাবি, যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে জাবেদুল ইসলাম, মানিকুল ইসলাম ও সালমা আক্তার স্বপ্নপুরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তাঁরা বাইরের লোক। এ ছাড়া সালমা আক্তার দর্শনার্থী ছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৭৩ জন শিক্ষার্থী চার দিনের শিক্ষাসফরে গত শনিবার উত্তরাঞ্চলে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. মহিউদ্দিনসহ ১০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাঁরা উঠেছেন জয়পুরহাটের একটি আবাসিক হোটেলে। গতকাল সফরের দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সমীক্ষার কাজ শেষে বিকেলে তাঁরা বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে যান।

সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাঁরা বের হয়ে জয়পুরহাটে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিনোদনকেন্দ্রে এক ছাত্রী তাঁর ব্যাগ ফেলে আসেন। পরে আরেক ছাত্রীকে নিয়ে তিনি ব্যাগ আনতে যান। এ সময় ওই রাইডের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী সবুজ মিয়া তাঁদের উত্ত্যক্ত করেন। ওই দুই ছাত্রী বিষয়টি সহপাঠীদের জানালে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে বিনোদনকেন্দ্রের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।

শিক্ষাসফরে থাকা বিভা‌গের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকা‌রী প্রক্টর মো. মহিউদ্দিন বলেন, মারধর ঠেকাতে গিয়ে তি‌নিও হামলার শিকার হন। প‌রে পু‌লিশ তাঁদের উদ্ধার করে। আহত‌ শিক্ষার্থীদের প্রথ‌মে ফুলবাড়ী উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লে‌ক্সে নেওয়া হয়। সেখান থে‌কে কয়েকজনকে দিনাজপুরের এম আবদুর র‌হিম মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন

দিনাজপুরের এম আবদুর র‌হিম মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লের চি‌কিৎসক ফয়সাল শা‌ফি জানান, আহত দুজ‌নের মাথায় গুরুতর জখম হ‌য়ে‌ছে। একজ‌নের মাথায় ১০‌টি ও আরেকজনের ১৭‌টি সেলাই দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা ছয়জন শিক্ষার্থীকে আজ দুপুরে উচ্চতর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। পরে সেখানে ভর্তি থাকা অন্য দুজনসহ মোট আট শিক্ষার্থীর সিটি স্ক্যানসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর তাঁদের আটজনকেই আশঙ্কামুক্ত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে বিকেলে চার শিক্ষার্থীকে জয়পুরহাটে থাকা তাঁদের অন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়। বাকি চার শিক্ষার্থীকে পুলিশের তত্ত্বাবধানে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে থেকে উড়োজাহাজে করে ঢাকায় পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা (শিক্ষার্থীরা) যে আমাদের ওপর হামলা করেছেন, এর সিসিটিভি ফুটেজ আছে। আমাদের ছেলেদের পিটাইতে পিটাইতে গেটের বাইর পর্যন্ত নিয়ে গেছে, তখন তাঁদের থামাইতে গিয়ে বাইরের অটোওয়ালা, সিএনজিওয়ালা, বাদামওয়ালাও মার খেয়েছেন।’

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মুক্তার হোসেন বলেন, ‘তাঁরা (শিক্ষার্থীরা) দুইটা গাড়িতে করে প্রায় ৮০-৯০ জন এসেছিলেন। ছাত্রছাত্রী সবাই ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে টিচারও ছিলেন। ওখানে তাঁরা রাইডে উঠছেন। ওনাদের যেকোনো একজন একটা ব্যাগ ফেলে গেছেন। কিছুক্ষণ পরে একজন ছাত্রী (অনামিকা আক্তার) এসে বলেছিলেন, এটা আমাদের ম্যাডামের ব্যাগ। তখন আমাদের ছেলেটি (সবুজ রানা) বলেছিল, “যাঁর ব্যাগ তাঁকে আসতে বলেন। ওনার যদি ব্যাগ হয়, তাহলে উনি প্রমাণ দিয়ে ব্যাগ নিয়ে যাক।” উনি বলছিলেন, “আমাকেই দেন।” পরে ম্যাডাম চলে এলে সবুজ তাঁকে ব্যাগ দেয়। তখন ম্যাডাম সবুজকে বলেন, “এখন দিতে পারলে, এতক্ষণ দিলে না।” তখন বিভিন্ন খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে, থাপ্পড় দেবে, চোরটোর বহুত কিছু বলেছে। ওই তর্ক চলতেছে, তখনই তাঁদের ছাত্ররা আমাদের ওপর হামলা করেন। মারের চোটে আমাদের ছেলে কাউন্টারের ভেতরে ঢুকেছিল। ওখান থেকে টেনে বের করে আবার মারেন।’

স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হবে কি না, জানতে চাইলে মুক্তার হোসেন বলেন, ‘যা করবে আমাদের মালিক করবেন, উনি দিনাজপুরে গেছেন, উনি আসুক, তারপর।’ বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী দেলওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কেউ তো কাউকে মারেনি। যা ঘটেছে, আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। মামলার বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি, আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করছি।’