বাগেরহাটে পাউবো কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ৪ দিন পর ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা

পাউবোর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, বুধবার রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন যুবক কার্যালয়ে আসেন
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রকৌশলীকে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে মারধর ও তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার চার দিন পর গতকাল রোববার বাগেরহাট সদর মডেল থানায় এ মামলা হয়। আজ সোমবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা পুলিশ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

মারধরের শিকার পাউবোর বাগেরহাট কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু হানিফ নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এতে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে ঘটনার পর গত বুধবার রাতে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন পাউবোর ওই কর্মকর্তা। তবে ‘তদন্তে সত্যতা পেলে’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন কারণ দেখিয়ে তিন দিন ধরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

মামলায় নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন মারজান হাওলাদার, রাকেশ দাস, পরাগ হাওলাদার ও সুজন ইসলাম। তাঁদের মধ্যে রাকেশ বাগেরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি, মারজান একই ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহসভাপতি, সুজন ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও পরাগ হাওলাদার ছাত্রলীগের নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় মামলার বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বুধবার রাতে মোহাম্মদ আবু হানিফ পাউবোর বাগেরহাট সদর উপবিভাগীয় কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। রাত নয়টার দিকে চার আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে সেখানে প্রবেশ করে ঠিকাদারি কাজের বকেয়া টাকা পাওনা আছে বলে তা পরিশোধের জন্য হুমকি দেন। তাঁরা আবু হানিফের টেবিলের কাছে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বাগেরহাট কাঁচাবাজার–সংলগ্ন বটতলায় যেতে বলেন। তিনি যেতে না চাইলে তাঁরা ওই কক্ষে তাঁকে মারধর করেন ও জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য ও ফটকের অপারেটর নাঈম বাধা দিলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আবু হানিফকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে শহর রক্ষা বাঁধের বটগাছের নিচে নেওয়া হয় এবং লাঞ্ছিত করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বর্তমানে আনসার সদস্য মারাত্মক আহত অবস্থায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বটগাছের নিচে যাওয়ার পর তাঁরা আবু হানিফকে ঠিকাদারি বিল বকেয়া আছে, তা পরিশোধের কথা বলেন এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। এমতাবস্থায় তিনি, তাঁর পরিবার ও পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন বলে মামলায় বলা হয়।

পাউবোর বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগ নামধারীরা মোটরসাইকেলে করে কার্যালয়ে ঢুকে উপসহকারী প্রকৌশলীকে মারধর করে ধরে নিয়ে যান। স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে একপর্যায়ে আবু হানিফকে ছেড়ে দেন তাঁরা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষী ব্যক্তিদের সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

তবে পাউবো কর্মকর্তাকে মারধর ও তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ। ওই কর্মকর্তা তাদের ঠিকাদারি কাজের বিল দিতে ঘুষ হিসেবে ৯০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন বলে তাদের অভিযোগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাউবো কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ওই কর্মকর্তা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম সেলের সমন্বয়কারী পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন, চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাগেরহাট সদর থানার মামলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৭, ৩৪২, ৩২৩, ৫০৬ ধারায় মামলাটি হয়েছে। পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।