এক মাসে পুলিশের ৭ মামলায় বিএনপির ৩৯১ নেতা-কর্মী আসামি, গ্রেপ্তার ৮

পুলিশের করা মামলায় বিএনপির তিন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার সামনে
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় নাশকতা ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে গত আগস্টে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩৯১ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে সাতটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ২০টি ককটেল, বস্তাভর্তি ১০০টি ইটের টুকরা ও ১০০টি লাঠি উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সবশেষ গত ৩১ আগস্ট নাশকতার পরিকল্পনা ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১২ নেতা-কর্মীর নামে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ। সরিষাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে। এ মামলায় সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি নজরুল ইসলামকে (৫০) গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার বলেন, বিএনপির জনস্রোত ঠেকাতে গত এক মাসে সরিষাবাড়ী উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির ৩৯১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ বাদী হয়ে ৭টি গায়েবি ও মিথ্যা মামলা করেছে। সাত মামলায় পুলিশ আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

বিএনপি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৩০ আগস্ট সরিষাবাড়ী থানার এসআই আবদুল হান্নান বাদী হয়ে বিএনপির ৫৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করে থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। ২৯ আগস্ট রাতে সাতপোয়া ইউনিয়নের ছাতারিয়া আবদুস সালাম তালুকদার উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জমায়েত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা অভিযোগে করা এই মামলায় আকতার তালুকদার, রুহুল আমিন ও চান কাজিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য।

গত এক মাসে থানায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩৯১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

২৫ আগস্ট মহাদান ইউনিয়ন পরিষদের সানাকৈর বাজার এলাকায় নাশকতার পরিকল্পার অভিযোগে বিএনপির কর্মী মোহাম্মদ ওয়াদুদকে (৪২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট এসআই মুজিবর রহমান বাদী হয়ে ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

২২ আগস্ট রাতে পৌরসভার আরামনগর কামিল মাদ্রাসা মাঠে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ২৩ আগস্ট এসআই শহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় ২৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় আবদুল মালেককে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৭ আগস্ট সাইঞ্চারপাড় জোড় সেতুর সামনে জমায়েত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ১৮ আগস্ট এসআই শিব্বির আহমেদ বাদী হয়ে দলটির ৭২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

১৫ আগস্ট রাতে মহাদান ইউনিয়নের সেঙ্গুয়া হাজি মোড়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা জমায়েত হয়ে সরকার পতনের জন্য নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন, এমন অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামীর সদস্য বেলাল হোসেনকে (৩৮) আটক করে। পরে এসআই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৩ নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলায় আটক বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

১ আগস্ট বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৮৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন এসআই হুমায়ূন মিয়া। এতে অভিযোগ করা হয়, ৩১ জুলাই রাতে সরিষাবাড়ী পৌরসভার পপুলার যাত্রী ছাউনির সামনে জমায়েত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। তবে একপর্যায়ে ভাটারা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য জুয়েল আকন্দকে (৫০) আটক করে পুলিশ। সেই মামলায় জুয়েল আকন্দকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাউকে হয়রানি করার জন্য মামলা করিনি। অভিযোগের সত্যতা পেয়েই বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন