ঘটনার সময় কারাগারে থেকেও যুবদল নেতা আসামি হলেন ছাত্রলীগের মামলায়
পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এক সপ্তাহ ধরে হবিগঞ্জ কারাগারে আছেন জেলা যুবদলের সহসভাপতি তৌফিকুল ইসলাম (৪২)। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় পৃথক একটি সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের দায়ের করা মামলার আসামি করা হয়েছে তাঁকে। আজ শনিবার দায়ের করা মামলাটির ৩৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে তৌফিকুল ইসলামকে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান ওরফে মাহী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন একসঙ্গে বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী আমাদের ওপর হামলা করেছেন। হয়তো–বা ভুল হতে পারে। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯ আগস্ট বিকেলে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচির পালন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। দুই ঘণ্টা ধরে চলা ওই সংঘর্ষে বিএনপির প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিলেন গুলিবিদ্ধ। ওই দিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জেলা যুবদলের সহসভাপতি তৌফিকুল ইসলামকে আটক করে। পরদিন ২০ আগস্ট তাঁকে ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ওই ঘটনায় ২১ আগস্ট পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় ৮০ নম্বর আসামি করা হয় তৌফিকুল ইসলামকে। ৫৪ ধারা মামলায় তাঁর জামিন হলেও পুলিশের দায়ের করা হামলা ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলায় তিনি এক সপ্তাহ ধরে হবিগঞ্জ কারাগারে আছেন।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন ২০ আগস্ট বিকেলে হবিগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রতিবাদ সভা শেষে মিছিলকারীরা শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়তে থাকেন। তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের বাধা দিলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।
এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর আজ বিএনপি ও তাঁর সহযোগী সংগঠনের ৮৭ নেতার নামে এবং অজ্ঞাত আরও দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান। এ মামলায় ৩৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেলা যুবদলের সহসভাপতি তৌফিকুল ইসলামকে। ২০ আগস্ট বিকেলের যে ঘটনার কথা উল্লেখ করে এ মামলা, তখন তৌফিকুল ইসলাম কারাগারে ছিলেন।
জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগ মিথ্যা মামলা করে যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে চায়, তার প্রমাণ তৌফিকুল ইসলামকে আসামি করার বিষয়টি।
জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সফিকুর রহমান বলেন, ‘তৌফিকুল ইসলাম আমাদের সংগঠনের সহসভাপতি। তাঁকে ১৯ আগস্ট পুলিশ আটক করে। এর পর থেকে তিনি কারাগারে। কারাগারে থাকা এ মানুষ কী করে ২০ আগস্টের ঘটনায় আসামি হন, এটাই আমাদের প্রশ্ন। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য মো. ইমরান মিয়া ২ সপ্তাহ ধরে ভারতে আছেন। তাঁকে আজকের মামলায় আসামি করা হয়। এতে প্রমাণ হয়, ছাত্রলীগ যে মামলাটি করেছে, তা মিথ্যা মামলা।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার বাদীর তথ্য অনুযায়ী আমরা মামলা গ্রহণ করি। তিনি কাকে আসামি করেছেন, সেটি তার তালিকা। কারাগারে থাকা অবস্থায় এমন কাউকে আসামি করে থাকলে তা পুলিশ তদন্তে বের হয়ে আসবে। তখন পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’