‘চিনির যে দাম মিষ্টির স্বাদ ভুলি যাওছি’

বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। ফলে চাপ বাড়ছে টিসিবির দোকানগুলোয়। পণ্য পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। সম্প্রতি রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘৬৫ টাকার চিনি বছর নাই ঘুরতে ১২০ টাকা হইল। দোকানিরা ৫ টাকার চা ১০ টাকা করিল, মিষ্টি জিলাপির দামও বাড়াইছে দ্বিগুণ। ওই জন্যে বাড়িত চিনি নিগাও না। হোটেলোতও চা-মিষ্টিও খাও না। চিনির যে দাম মিষ্টির স্বাদ ভুলি যাওছি।’ চিনির ঊর্ধ্বমুখী দামে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের তারাগঞ্জের দিনমজুর সাহিবার রহমান।

আজ মঙ্গলবার সকালে ইকরচালী বাজারে সাহিবার রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, পাঁচ সদস্যের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী। এখন এলাকায় কাজের সংকট থাকায় প্রতিদিন কাজও পান না। দিনমজুরির আয় দিয়ে তিন বেলা খাবার জোটে না। তাই সকালের খাবারে চা-চিনি আর মুড়ি রাখতেন। কিন্তু দাম বাড়ায় তিন মাস হলো চিনি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন
তারাগঞ্জে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। খোলা বাজারে চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে কেনার কথা বলছেন।

ইকরচালী বাজারে সাহিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন পোদ্দারপাড়া গ্রামের দিনমজুর ফজলু মিয়া। তিনি বলেন, ‘বাবা, সরকার তো গরিব মারা ফাঁন বসাইসে। রাইত পোহাইলেই শুনুছি জিনিসের দাম বাড়ছে। হামার তো এমন দশা হইছে চা-মুড়ি খায়াও বাচির পাওছি না। সখ করিও আনা মিষ্টির স্বাদ নিবার পাওছি না। ছয় দিন থাকি ফির চিনির দাম বাড়ছে। সরকার সউগেরে দাম বাড়ায়, বাড়াউক, সাথে হামার কৃষাণের দাম বাড়াইলে তো আর সমস্যা থাকে না।’

এমন আক্ষেপ শুধু সাহিবার ও ফজলু মিয়ার নয়; সরকারি ঘোষণার আগেই এক সপ্তাহের ব্যবধানে তারাগঞ্জে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। খোলা বাজারে চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে কেনার কথা বলছেন। বছর ঘুরতে চিনির দাম দ্বিগুণ হওয়ায় মিষ্টির স্বাদ ভুলতে বসেছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারা।

আরও পড়ুন
চিনি
ফাইল ছবি

বর্তমানে প্রতি কেজি চিনির সরকারি নির্ধারিত খোলা দর ১০২ টাকা আর প্যাকেটজাত ১০৭ টাকা। এক সপ্তাহ আগে হাটবাজারে তা ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এক বিজ্ঞপ্তিতে চিনির দাম বাড়ানোর কথা জানায়।

এতে প্রতি কেজি চিনিতে ৫ টাকা বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৭ ও প্যাকেটজাত ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু খোলা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ ও প্যাকেটজাত ১২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

আরও পড়ুন

ওকড়াবাড়ি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী হামিদুল হক বলেন, ‘আবার তো চিনির দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়াচ্ছে। এ জন্য ডিলাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের চিনি দিচ্ছেন না। আগে থেকেই বেশি দাম নিচ্ছেন। যার কারণে আমরাও একটু বাড়িয়ে বিক্রি করছি। কম দামে কিনতে পারলে, কম দামে বিক্রি করব।’

তারাগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরাও পারি’র সভাপতি আজাহারুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণায় ব্যবসায়ীরা আগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে চিনি–সংশ্লিষ্ট সব খাদ্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এখন ৫ টাকার চা ৭ থেকে ১০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। জিলাপি, মিষ্টি, চকলেট, বিস্কুটের দামও একইভাবে বেড়েছে।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিনির ডিলার বলেন, ‘আমরা চাহিদানুযায়ী চিনি পাচ্ছি না। মিলমালিকেরা চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। চিনির সংকট দেখা দেওয়ায় দাম একটু বেড়েছে। তবে মিলমালিকেরা চিনির সরবরাহ ঠিক রাখলে বাজারে অস্থিরতা থাকবে না।’

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। চিনিসহ অন্য কোনো পণ্যের দাম ক্রেতার কাছে বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে অভিযোগের সত্যতা পাচ্ছেন, সেখানেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।