দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে বিএনপির ২১ প্রার্থী

বিএনপি

বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান ২১ নেতা-কর্মী। গতকাল শুক্রবার প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে পাঁচজন তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র কিংবা কাউন্সিলর পদে দলগতভাবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। সিটি নির্বাচনের শুরু থেকেই নেতা-কর্মীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কথা বলছে দলটি। সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তাঁকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এরপরও বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।

আরও পড়ুন

বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে বিএনপির পদধারী কোনো নেতা প্রার্থী হননি। তবে দলের প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিবের ছেলে কামরুল আহসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন মহানগরের নেতারা। কামরুল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁর বাবা আহসান হাবিব মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো চাপ ছিল না, বরং প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের চাপ ছিল।’ কামরুলের দাবি, দলের নেতারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে তাঁর পক্ষে থাকবেন। তিনি টেবিলঘড়ি প্রতীক পেয়েছেন। তাঁর বাবা ওই প্রতীক নিয়ে বরিশাল পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

কামরুল আরও বলেন, ‘বরিশাল সিটির অন্তত ২০টি ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের ৭টিতে বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া চারটি ওয়ার্ডে জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া নেতাদের নানাভাবে বুঝিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চেষ্টা করেন মহানগরের শীর্ষ নেতারা। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে মোট পাঁচজন তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মৌখিক ঘোষণা দিলেও তাঁদের মধ্যে একজন করেননি।

আরও পড়ুন

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির নেতারা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সৈয়দ হাবিবুর রহমান, ৪ নম্বরে ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ইউনুস মিয়া, ৬ নম্বরে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, ৮ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সদস্য মো. সেলিম হাওলাদার, ৯ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ ও যুবদল নেতা হুমায়ুন কবির, ১৫ নম্বরে বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান, ১৮ নম্বরে ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব জিয়াউল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাবের আবদুল্লাহ, জেলা তাঁতি দলের সাবেক সভাপতি কাজী মো. শাহিন ও বিএনপি নেতা মানিক ইসলাম, ১৯ নম্বরে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম, ২২ নম্বরে মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সামাদ, ২৪ নম্বরে মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ, ২৬ নম্বরে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ২৮ নম্বরে সাবেক কাউন্সিলর বিএনপির নেতা মো. হুমায়ন কবির এবং ৩০ নম্বরে বিএনপির নেতা খায়রুল মামুন।

এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ নম্বরে মহানগর বিএনপির সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর জাহানারা বেগম, ৯ নম্বরে সেলিনা বেগম ও ১০ নম্বরে রাশিদা পারভীন প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া আরও চারটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থক চারজন প্রার্থী হয়েছেন।

আরও পড়ুন

বরিশালে পদধারী অনেক নেতা প্রার্থী হওয়ায় দলটির সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে নেতাদের মধ্যে হতাশা ও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। মহানগর বিএনপির সাবেক ও বর্তমান ছয়জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ দেখায় দলে খারাপ নজির সৃষ্টি হলো। বিশেষ করে মহানগর কমিটির দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন নেতার এমন আচরণে তাঁরা হতাশ। এ জন্য দলের সাংগঠনিক শক্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তাঁরা মনে করেন।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন প্রত্যাহার করেছেন। যাঁরা করেননি, তাঁদের তালিকা করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে।’

আরও পড়ুন

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাঁচজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ সাইদুল ইসলাম, ৫ নম্বরে সাবেক কাউন্সিলর মাইনুল হক চিশতি, ২২ নম্বরে সাবেক কাউন্সিলর আ ন ম সাইফুল আহসান ও যুবদল নেতা মো. হাবিবুল্লাহ এবং ২৬ নম্বরে ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান। তবে ২২ নম্বরে মহানগর বিএনপির ১ নম্বর সদস্য আ ন ম সাইফুল আহসান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও তাঁর স্ত্রী মহিলা দল নেত্রী প্রার্থী হিসেবে আছেন। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে আছেন।

বিএনপি নেতা শাহ আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটারদের দাবি উপেক্ষা করতে পারিনি। স্থানীয় রাজনীতিতে এটা পারা যায় না। কারণ, এখানে নির্বাচন করব বলে দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন ঘরে উঠে যাওয়া সম্ভব নয়।’