নৌকার প্রচারে সক্রিয় প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা, তালিকাসহ আপত্তি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর চারঘাটের রাওথা কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে তিনি নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। বাঘার মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি চারঘাটের ভায়া লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সক্রিয় কর্মী হিসেবে তাঁকে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

ওই দুজনসহ চারঘাট ও বাঘা উপজেলার ৩৫ জন শিক্ষকের একটি তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. রাহেনুল হক।

আরও পড়ুন

রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে উপজেলাভিত্তিক পৃথক দুই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ওই ৩৫ জন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন কিংবা ছিলেন। এমনকি এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে ওই শিক্ষকদের দলীয় পদ–পদবি ও প্রচারণায় থাকা কয়েকজনের ছবিও সংযুক্ত করেছেন রাহেনুল হক।

গত সোমবার বাঘা উপজেলার ১৭ জন এবং গতকাল বৃহস্পতিবার চারঘাট উপজেলার ১৮ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে নিয়ে আপত্তি তুলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক। রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হক।

আরও পড়ুন

রাহেনুল হক পৃথক দুই অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি কিছু সুবিধাভোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তাঁরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের আশঙ্কা আছে। তিনি ওই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন।

চারঘাট উপজেলার ৬২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মধ্যে লিখিত অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করেছেন রাহেনুল হক। তাঁরা সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ১৭ জনই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে বাঘার ৬৭ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মধ্যে ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

অভিযোগের বিষয়ে রাওথা কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নৌকার সমর্থক। শিক্ষকেরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না, এ ধরনের আচরণবিধি তিনি জানতেন না। এটা নির্বাচন কমিশনের আরও ভালোভাবে প্রচার করার দরকার ছিল। তিনি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হওয়ার আগে প্রচারে গিয়েছিলেন। পরে আর যাননি। তিনি দাবি করেন, এমন অভিযোগ করতে পারে ভেবে তিনি গতকাল বুধবার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপজেলার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।

তবে কেউ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাননি বলে নিশ্চিত করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদা খানম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই-এক দিনে কোনো প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেননি।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এ ব্যাপারে খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।