ক্রাচে ভর দিয়ে কেন্দ্রে এসে অন্যের সহায়তায় ভোট দিলেন বাবুল

প্রথমে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবুল পাটোয়ারী। আজ সোমবার সকাল আটটায় বরিশালের রূপাতলী হাউজিং এলাকার আবদুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে
ছবি: দীপু মালাকার

সবার আগে ভোট দিতে ক্রাচে ভর করে কেন্দ্রে আসেন বাবুল পাটোয়ারী। গোপন কক্ষে প্রবেশের পর অনেক চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারছিলেন না তিনি। একপর্যায়ে গোপন কক্ষে প্রবেশ করলেন মো. সোহাগ মিয়া নামের আরেকজন ভোটার। তাঁর সহায়তায় ভোট দিলেন বাবুল।

আজ সোমবার সকাল সোয়া আটটায় বরিশাল শহরের রূপাতলী হাউজিং এলাকার শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৯৬ নম্বর ভোটকেন্দ্রের ৭ নম্বর বুথে বাবুল পাটোয়ারী ভোট দেন।

৫৫ বছর বয়সী বাবুল পাটোয়ারী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁর ডান পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইসড)। তিনি চেয়েচিন্তে খান। দুই পাশে ক্রাচে ভর করে তাঁকে হাঁটতে হয়। ক্রাচে ভর করেই সকাল পৌনে আটটার দিকে তিনি কেন্দ্রে পৌঁছান।
স্কুলটির দ্বিতীয় তলার ছয়টি বুথে ও তৃতীয় তলার দুটি বুথে ভোট নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সরেজমিন দেখা যায়, ভোট দিতে ক্রাচে ভর করেই বাবুল সিঁড়ি ভেঙে প্রথমে দ্বিতীয় তলায় যান। সেখান থেকে আনসার সদস্যরা জানান, তাঁর ভোট ৭ নম্বর বুথে। পরে ক্রাচে ভর করেই তিনি তৃতীয় তলায় যান। এ সময় তাঁকে দুজন সাংবাদিক সিঁড়ি বেয়ে উঠায় সহযোগিতা করেন।

তৃতীয় তলার ৭ নম্বর বুথে বাবুল ছিলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে বাবুলকে ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে যেতে দেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাপস কুমার ঘোষ। এর আগে ওই বুথে দায়িত্ব পালনকারী পোলিং এজেন্ট ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া বাবুলকে বুঝিয়ে দেন।

বাবুল ৮টা ৫ মিনিটে গোপন কক্ষে প্রবেশ করেন। কিন্তু ভোট দিতে পারছিলেন না। মিনিট দেড়েক পর বাবুল ভেতরকে থেকে সাহায্য চেয়ে কাউকে ভেতরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু নিয়ম না থাকায় বাবুলকে বাইরে থেকেই ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছিলেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে বাবুল গোপন কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। বাইরে এসে বাবুল জানান যন্ত্রে তিনি কোনো প্রতীক দেখতে পাচ্ছেন না। তখন একজন কর্মকর্তা গোপন কক্ষের কালো পর্দা সরিয়ে ইভিএম যন্ত্র ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করে দেখেন। ইভিএম যন্ত্রে কোনো ত্রুটি না পেয়ে আবারও বুঝিয়ে বাবুলকে ভেতরে পাঠান সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাপস কুমার।

কিন্তু তখন বাবুল জানান, তিনি চোখেও কিছুটা কম দেখতে পান। এভাবে সময় নষ্ট হতে থাকায় বাবুলের পরে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাদের মধ্যে সোহাগ মিয়া নামের একজন ভেতরে গিয়ে তাঁকে ভোট দিতে সহায়তা করেন। পরে ৮টা ১৩ মিনিটে বাবুলের ভোট প্রদান শেষ হয়।

ভোট দেওয়া শেষে বাবুল পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, চোখেও তিনি ঠিকমতো দেখতে পান না। প্রতীক দেখতে না পাওয়ায় তাঁর ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছিল। পরে একজন তাঁকে মার্কা দেখিয়ে দিয়েছেন। পরে তিনি নিজেই ভোট দেন। ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন

বাবুল পাটোয়ারী ছাড়াও ওই কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত আরও কয়েকজন ভোটারকে ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। ভোট দিতে না পারায় একজনের ভোট দিতেই সময় লাগছিল।

সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাপস কুমার ঘোষ বলেন, প্রার্থীর এজেন্ট, নির্বাচনের কর্মকর্তা কারও গোপন কক্ষে প্রবেশের অনুমতি নেই। ভোটারের সমস্যা থাকলে তিনি কাছের কোনো আত্মীয়কে সঙ্গে আনতে পারেন। এ ছাড়া ভোটারদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকের বুঝতে সময় লাগছে। অনেকে ঠিকমতো বুঝতেও পারছেন না।

আরও পড়ুন