খাবারের খোঁজে ছয় দিন ধরে লোকালয়ে বন্য হাতির দল, দেখতে জনতার ভিড়

শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তে খাদ্যের সন্ধানে ছয় দিন ধরে কালাপানি ও মধুটিলা এলাকায় অবস্থান করছে ৪০টি বন্যহাতির একটি দল। গতকাল সোমবার বিকেলে মধুটিলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে লোকালয় চষে বেড়াচ্ছে ৪০টি বন্য হাতির একটি দল। সীমান্তের জঙ্গল ছেড়ে খাবারের সন্ধানে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে উপজেলার কালাপানি ও মধুটিলা গ্রামে অবস্থান করছে হাতির পালটি। বন্য হাতি দেখতে প্রতিদিন সীমান্ত সড়কে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে।

বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার রফিকুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ৪০টি হাতির একটি পালে ৫টি শাবক আছে। ছয় দিন ধরে হাতির পালটি কালাপানি ও মধুটিলা পাহাড়ি টিলায় অবস্থান করছে। পালটিকে কেউ যেন বিরক্ত করতে না পারেন, সে জন্য তাঁরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন।

আরও পড়ুন

বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তের জঙ্গল ছেড়ে উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের কালাপানি ও মধুটিলা জঙ্গলে চলে আসে হাতির পালটি। দিনের বেলা খাবারের জন্য বিভিন্ন টিলায় ঘোরাঘুরি করলেও শেষ বিকেলে হাতির পালটি লোকালয়ে নেমে আসে। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় গ্রামবাসী মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতির পালটিকে জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করেন। গত শুক্রবার বিকেলে বন্য হাতির দলটি প্রচণ্ড গরমে স্থানীয় উসমান আলীর মাছের খামারের পুকুরে নেমে পড়ে। এ সময় হাতি ও শাবকদের গোসলে পুকুরের অনেক মাছে মরে ভেসে থাকতে দেখা যায়। পরে সন্ধ্যার দিকে মশাল জ্বালিয়ে হাতির পালটিকে পুকুর থেকে জঙ্গলে ফেরত পাঠান এলাকাবাসী। এ সময় পুকুরপাড়ে থাকা একটি টিনের ঘর ভেঙে ফেলে হাতির পাল। ওই ঘরে থাকা মাছের খাবার, টিউবওয়েল, পুকুরপাড়ের সীমানাদেয়াল, ঘরের আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিস মাড়িয়ে তছনছ করে পালটি। রাতে কালাপানি গ্রামের জসিম উদ্দিনের বসতঘর ও রান্নাঘর গুঁড়িয়ে দেয়। গত রোববার রাতে হাতির পালটি মধুটিলা ইকোপার্কে ঢুকে একটি রেস্তোরাঁর রান্নাঘর ভেঙে দেয়।

গতকাল সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুটিলা ইকোপার্ক এলাকার সীমান্ত সড়কে ২৫ থেকে ৩০টি বন্য হাতি অবস্থান করছে। এতে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সড়কে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দুই পাশে গ্রামবাসী ও উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। সড়ক থেকে হাতি সরাতে মানুষ হইহুল্লোড় করছেন। পরে হাতির দলটি সড়কের পূর্ব পাশে একটি টিলার দিকে চলে যায়।

পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও বুরুঙ্গা কালাপানি এলাকার বাসিন্দা মো. শামসুদ্দিন বলেন, এখন সীমান্তে কোনো ফসল নেই। হাতির পালটি সীমান্ত ছেড়ে মধুটিলা কালাপানি গ্রামের জঙ্গলে চলে এসেছে। প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। মানুষের ঘরবাড়িসহ নানা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে দুটি গ্রামের মানুষ হাতির আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছয় দিন ধরে কালাপানি ও মধুটিলা পাহাড়ের ঢালে হাতির পালটি অবস্থান করছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বন বিভাগের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সরকারিভাবে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে হাতির কোনো ক্ষতি করা যাবে না বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল প্রথম আলোকে বলেন, মূলত খাদ্যের সন্ধানে বন্য হাতির পালটি লোকালয়ে চলে এসেছে। সীমান্তে বন্য হাতির খাদ্যের ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো হাতি লোকালয়ে আসবে না। এ নিয়ে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় হাতির খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে।