ভোলায় উত্তাল নদীতে মাছ ধরতে নেমেছেন অনেক জেলে
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে গতকাল শনিবার রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আজ রোববার দুপুর থেকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল। এমন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ভোলায় অনেক দরিদ্র জেলে নদীতে মাছ ধরতে নেমেছেন।
ভোলা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোল্লা মো. এমদাদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে জেলেদের নদী ও সাগরে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। তবুও অনেক জেলে পেটের দায়ে নদীতে নামছেন।
আজ দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত থাকায় ভোলা সদরের ঘাটগুলোতে তেমন লোকসমাগম নেই। বেলা একটার পর থেকে বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে। অল্পসংখ্যক দরিদ্র জেলে মেঘনায় মাছ ধরতে নেমেছেন। একেকজন জেলে যে মাছ পাচ্ছেন, তা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মিটছে। তবে ভোলার বাইরে মাছ পাঠানো যাচ্ছে না।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতুলি এলাকার জেলে অজিউল্লাহ (৪৫) আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে একটি দাঁড়টানা নৌকায় মাছ ধরতে নেমেছেন। যে মাছ পেয়েছেন, বেলা একটার দিকে ঘাটে ফিরে তা তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
অজিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভাবের সংসার। দুদিন বেকার ছিলাম। ঝড়ের কারণে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত চলছে জানি, এরপরও পেটের দায়ে ভাগীদের অনুপস্থিতিতে ছেলেদের নিয়ে নদীতে নেমেছি। তবে বেশি দূর যাইনি, যা মাছ পেয়েছি তা হাজার তিনেক টাকার বেচতে পেরেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, দুই দিনের ঋণ শোধ করে সংসার চলবে।’
অজিউল্লার মতো তুলাতুলি এলাকার ঘাটে শফি মাঝি ১ হাজার ৪০০ টাকা, ফজলুর রহমান মাঝি ৫ হাজার টাকা, মাকসুদুর রহমান ২ হাজার ৫০ টাকা, ভেদুরিয়ার জেলে মো. হোসেন ১ হাজার ১০০ টাকা এবং আফজাল হোসেন মাঝি ১ হাজার ৬০০ টাকা মাছ বিক্রি করেছেন।
এ ছাড়া আজ উপজেলার অনেক এলাকায় বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শত শত জেলেকে নদীতে চিংড়ি রেণু ধরতে দেখা গেছে। তুলাতুলি এলাকার শফিজল মাঝি (৬৫) বলেন, একেকজন রেণুশিকারি প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার রেণু বিক্রি করেন। এ কারণে বৈরী আবহাওয়া থাকার পরও স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে রেণু ধরতে নদীতে নেমেছেন তাঁরা।
ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা চডারমাথা মাছ ঘাটের আড়তদার মো. শাহাবুদ্দিন ফরাজি প্রথম আলোকে বলেন, আজ ২০ শতাংশ হতদরিদ্র জেলে নদীতে নেমেছেন। মাছ ধরতে না পারলে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হতো।
মাছ কম হওয়ায় দাম বেশি বলে জানিয়েছেন তুলাতুলি মাছ ঘাটের আড়তদার মঞ্জুর আলম। তিনি বলেন, দামের কারণে আজ সবাই মাছ কিনতে পারছেন না। ২০০-৩০০ গ্রামের ইলিশ ৫০০-৭০০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে।