রিটার্নিং কর্মকর্তা কোলাকুলি করিয়ে দেওয়ার পরও কথা রাখলেন না তাঁরা

রাজশাহী-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হককে নিয়ে বৈঠক করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সোমবার বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কথা দেওয়ার পরও রাজশাহীর বাগমারায় নৌকা ও কাঁচি প্রতীকের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি হামলা থামেনি। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে দুই প্রার্থীর কোলাকুলির ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই উভয় পক্ষের তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করেছে। সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণার অঙ্গীকার নৌকা ও কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী কেউই রক্ষা করেননি।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক এবার দলের মনোনয়ন পাননি। তিনি কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন দলটির বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির আবু তালেব প্রামাণিক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সাইফুল ইসলাম (নোঙ্গর), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) জিন্নাতুল ইসলাম (আম) ও স্বতন্ত্র বাবুল হোসেন (মাথাল)।

আরও পড়ুন

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হকের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বৈঠক করেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালেহ মো. আশরাফুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দুই প্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণার অঙ্গীকার করেন। বৈঠক শেষে উভয় প্রার্থীর মধ্যে কোলাকুলি করিয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাগমারার শুভডাঙ্গার সৈয়দপুর গ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া কাঁচির নির্বাচনী ক্যাম্প (বাঁয়ে)। ডানে ভবানীগঞ্জের সাদিপুরে নৌকার ক্যাম্পে পুড়ে যাওয়া পোস্টার
ছবি: সংগৃহীত

এ অঙ্গীকারের কয়েক ঘণ্টা পরই আবারও নৌকা ও কাঁচির সমর্থকেরা সহিংসতায় জড়িয়েছেন। রাতেই উভয় পক্ষের পাঁচটি নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থীর দুটি ও কাঁচির প্রার্থীর তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। শুভডাঙ্গা, গনিপুর ও ঝিকরাই—এ তিন ইউনিয়ন এবং ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় এসব ক্যাম্প পোড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এস এম মামুনুর রশিদ বলেন, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাদিপুরে এবং গনিপুর ইউনিয়নে তাঁদের দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প সোমবার রাতের কোনো এক সময়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে নৌকার ব্যানার, পোস্টার ও চেয়ার—সব পুড়ে যায়। সকালে তাঁদের লোকজন বিষয়টি দেখতে পান। মামুনুর রশিদ অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের সমর্থকেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, মামলা দিয়ে ফাঁসানোরও ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কাঁচির কর্মী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন, শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর ও বাইগাছায় কাঁচি প্রতীকের দুটি এবং ঝিকরাই ইউনিয়নে একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সোমবার রাতের কোনো এক সময় এই তিনটি ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা ইউএনওর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী শান্তি বজায় রাখার অঙ্গীকার করলেও তিনি কথা রাখেননি। অঙ্গীকার করার পরও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন।

আরও পড়ুন

নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘এনামুল হকের লোকজন নৌকার ক্যাম্প পুড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি নাটক সাজিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে চাপে রাখছেন।’

বাগমারার ইউএনও উজ্জ্বল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই প্রার্থীর পক্ষে অভিযোগ পেয়ে পুলিশকে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সোমবার উভয় প্রার্থী শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট করার অঙ্গীকার করেছেন। প্রশাসন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ইউএনওর কাছ থেকে দুই প্রার্থীর পক্ষে অভিযোগ পেয়েছেন। এগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন