শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে শিকল পরে অনশনে সেই যুবক

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আবারও অনশনে বসেছেন হুমায়ন আহম্মেদ। রোববার শহরের সাতমাথা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা শহরে এবার শিকল পরে অনশনে বসেছেন হুমায়ন আহম্মেদ ওরফে মো. রুমেল। কাফনের কাপড় পর আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ১২ দিনের মাথায় আজ রোববার সকাল থেকে শহরের সাতমাথা এলাকায় জিলা স্কুলসংলগ্ন ফুটপাতে কাফনের কাপড় ও শিকল পরে অনশনে বসেন তিনি।

হুমায়ন আহম্মেদ বগুড়া সদর এলাকার বাসিন্দা। ইউটিউব ভিডিও বানানো এই যুবক একজন ক্রিকেটভক্ত। শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিলের বিষয়ে বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বে স্টেডিয়ামের মূল মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২ মার্চ এনএসসি সচিব বরাবর পাঠানো বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তরের এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

আরও পড়ুন

ওই দিনই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কর্মরত বিসিবির ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে পরে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বদলি করা হয়। এ ছাড়া স্টেডিয়ামে থাকা রোলার, সুপারশপার, পিচ কাভারসহ মাঠ ও খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম ও ড্রেসিংরুমের আসবাব ঢাকায় নিয়ে যায় বিসিবি।

চিঠিতে বলা হয়, বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার ‘অসহযোগিতার’ কারণে বিসিবি শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে নিয়মিতভাবে লিগ ও টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারছে না। তাই রক্ষণাবেক্ষণসহ স্টেডিয়ামটির যাবতীয় দায়দায়িত্ব এনএসসির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।

বগুড়ার খেলোয়াড়, দর্শক, ক্রীড়া সংগঠকসহ সাধারণ মানুষ বিসিবির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

আরও পড়ুন

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভায় কিছু সিদ্ধান্তের রেজল্যুশনসহ ভেন্যু পুনর্বিবেচনার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বিসিবির কাছে গত ৭ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে বিসিবি থেকে এখন পর্যন্ত ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা আসেনি। বিসিবির আগামী বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করছি।’

বিসিবির সূচি অনুযায়ী, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত শেখ কামাল জাতীয় যুব ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিসিবিকে চিঠি দিয়ে জানায়, ১ মার্চ থেকে স্থানীয় প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ শুরু হবে বলে যুব ক্রিকেটের জন্য মাঠ দেওয়া সম্ভব নয়। তারাও লিগের সূচি করেছে, ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। এরপরই বিসিবি থেকে ভেন্যু বাতিলের ওই সিদ্ধান্ত আসে।

শহরের সাতমাথা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গায়ে কাফনের কাপড় এবং হাত ও গলায় শিকল পরে ফুটপাতে অনশনে বসেছেন হুমায়ন আহম্মেদ। তাঁর পেছনে টানানো ব্যানারে লেখা ‘বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ভেন্যু (ক্রিকেট) বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ ফেরানোর দাবিতে প্রতিবাদী অনশন’। বুকে ঝোলানো প্ল্যাকার্ডেও একই দাবির কথা লেখা। তাঁকে দেখতে অনেকেই সেখানে ভিড় করেছেন।

আরও পড়ুন

হুমায়ন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতো। কিন্তু দেড় যুগ ধরে এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় না। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ২ মার্চ বিসিবি তাদের জনবল ও খেলার সরঞ্জাম প্রত্যাহার করেছে। সেদিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্টেডিয়ামের মৃত্যু হয়েছে। পরিচর্যার অভাবে স্টেডিয়ামের পিচ নষ্ট হচ্ছে। স্টেডিয়ামে ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ৪ মার্চ থেকে আমরণ অনশন শুরু করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এরপর এ স্টেডিয়ামে ভেন্যু ফেরানোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আশ্বাসে ১৮ মার্চ পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়ায় নতুন করে অনশনে বসেছি।’

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা পায় বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। পরের মাসেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় স্টেডিয়ামটির। কিন্তু ওই বছরের ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে চলে যায় স্টেডিয়ামটি। ২০০৬ সালের পর থেকে এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি। তবে জাতীয় লিগ, যুব ক্রিকেট লিগ, প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ এবং করপোরেট লিগের ম্যাচ হয়েছে।

আরও পড়ুন