মোটরসাইকেল ভাঙচুর, মারপিটের মামলায় ছাত্রদল নেতার মা–বাবাও আসামি

নারায়ণগঞ্জ জেলার মানচিত্র

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মশালমিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও দুজনকে পেটানোর মামলায় ছাত্রদলের নেতার বাবা-মাকে আসামি করা হয়েছে। দশম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর (১৭) বয়স ২৯ বছর দেখিয়ে তাকেও মামলার আসামি করা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

সোমবার বিকেলে মামলাটি করেন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হানিফ মিয়া। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন মাসুদুর রহমান, তাঁর বড় ভাই ইজিবাইকচালক মো. মাসুম, মাসুদুরের বাবা মো. শাহাবুদ্দিন (৬০), মা উম্মে হানি (৫০), জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা ওরফে বাবু, তাঁর ছোট ভাই ছাত্রদলের নেতা শিশির, ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রনি হাসান, গাউছিয়া সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী মো. সাব্বির, ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী (১৭) ও ছাত্রদলের কর্মী মো. আল আমিন। এজাহারে গত শনিবার রাতে ছাত্রদলের মশালমিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ, মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং দুজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাজধানীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত শনিবার রাত ৯টায় ভুলতা এলাকায় অনুসারীদের নিয়ে মশালমিছিল করেন মাসুদুর রহমান। এরপর রাতেই তাঁর বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই সময় যুবদল ও ছাত্রদলের আরও পাঁচ নেতা-কর্মীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

মামলার ৩ নম্বর আসামি শামসুদ্দিন ঘটনার দিন অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী ছিলেন বলে তাঁর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, শামসুদ্দিন হৃদ্‌রোগ, লিভার ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। ফলে পাঁচ বছর ধরে তিনি কারও সহযোগিতা ছাড়া একা চলাফেরা করতে পারেন না। শনিবার রাতে মাসুদুরের বাড়িতে হামলার সময়ও শামসুদ্দিন তাঁর বিছানায় ছিলেন। সেখানেই তাঁকে মারধর করা হয়। তার পর থেকে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মামলার ৯ নম্বর আসামি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। এজাহারে তার বয়স ২৯ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ছেলেকে মামলার আসামি করার বিষয়টি জানতে পারেন তার বাবা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোলা আমার লগে দোহানে আছিল। পরে হুনি হেয় নাকি মারামারি করছে। কেউ শত্রুতা কইরা মামলা দিসে কি না, একটু দেহেন।’ ছেলের বয়সের বিষয়ে বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমার পোলার বয়স ১৬-১৭। হেয় টেইনে পড়ে। ঘরে হের সার্টিফিকেটও আছে।’

ছাত্রদলের নেতা মাসুদুর প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের মধ্যে মোট পাঁচজন সেদিনের মিছিলে ছিলেন। মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার সময় হামলা হলে তাঁদের ছেলেরাও ঝামেলা করেছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে সাব্বির ও দশম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে তিনি চেনেন না। তাঁরা মিছিলে ছিল না। আর তাঁর বাবা, মা, ভাইয়ের তো মিছিলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতেই পরিবারের সদস্যদের আসামি করেছে।

আরও পড়ুন

মামলার ৮ নম্বর আসামি স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সাব্বিরের বড় ভাই মো. রাজীব প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, তাঁর ভাইকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে তাঁদের জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছে। সে কারণে ওই নেতা তাঁর ভাইকে মামলায় আসামি করেছেন। তবে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি ওই নেতার পরিচয় জানাতে রাজি হননি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী হানিফ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিছিলের পরে ঝামেলার সময় মাসুদের মা আমাদের একজনকে বাড়ি দিসিল।’ এ সময় মাসুদুরের বাবা ছিলেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘ওর বাবা ছিল না।’ তাহলে তাঁকে কেন আসামি করা হয়েছে, জানতে চাইলে বলেন, ‘ওনারে আসামি করা হয় নাই।’ এ সময় তাঁর কাছে অভিযোগের ৩ নম্বর আসামির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

পরে বেশ কয়েকবার ফোন করার পর হানিফ মিয়া তা রিসিভ করেন। এ সময় স্কুলশিক্ষার্থীকে আসামি করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘সে ছাত্রদল করে। এই ছেলের বয়স ২২-২৩ হইব।’ মামলায় ২৯ বছর উল্লেখ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি দেখার করার কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

আরও পড়ুন

এদিকে ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমানের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পরদিন রোববার সশস্ত্র মহড়া দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অস্ত্রধারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাজমুল হাসান ও ছাত্রলীগের নেতা দুর্জয় পাল গা ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আলোর প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অস্ত্রধারীদের পরিচয় শনাক্ত করে অস্ত্রের উৎস খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।’

মামলার অসংগতির বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, অভিযোগে বাদী মিথ্যা তথ্য দিলে অভিযোগপত্রে তা উল্লেখ করা হবে। নির্দোষ কাউকে পুলিশ হয়রানি করবে না।