অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে: বিএনপি নেতা এমরান সালেহ

কিশোরগঞ্জে নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা–মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ। বৃহস্পতিবার শহরের স্টেশন রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) বলেছেন, অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা বিনা উসকানিতে বিএনপিসহ জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বিচার গুলি করে হতাহত, মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নির্যাতন চালাচ্ছেন। এর জবাব একদিন তাঁদের দিতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ এমরান সালেহ এসব কথা বলেন। ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিএনপির কর্মীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া জেলা শহরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দলটি।

আরও পড়ুন

সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। এ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে কিছু কর্মকর্তা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর বিনা কারণে হামলা চালাচ্ছেন, মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন। অতি উৎসাহী এ পুলিশ সদস্যরা বিনা উসকানিতে বিএনপিসহ জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বিচার গুলি করে নেতা-কর্মীদের হতাহত করে মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নির্যাতন চালাচ্ছেন। এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে জড়িত অতি উৎসাহীদের জনগণ চিহ্নিত করে রাখছে। ভবিষ্যতে এর দায় তাঁদের নিতে হবে এবং জনতার আদালতে তাঁদের বিচার হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান, জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, শরীফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

হামলা–মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

এদিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি, লাঠিপেটা, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার প্রতিবাদে দুপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় সড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা তীব্র যানজট দেখা যায়।

কিশোরগঞ্জে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা–মামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার শহরের স্টেশন রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

কর্মসূচি চলাকালে দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় তাঁদের বারবার সড়ক থেকে সরে যেতে আহ্বান জানায় পুলিশ। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে বিএনপির নেতারা সরকারের পদত্যাগসহ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আরও পড়ুন

গত সোমবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় যোগ দিতে যুবদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসার সময় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এ সময় জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামানসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশের গুলিতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

অন্যদিকে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ দাবি করেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ ঘটনায় সোমবার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া, নাজমুল আলম, আমিনুল ইসলাম, যুবদল সভাপতি খসরুজ্জামানসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করে মামলা করে। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।