রাজশাহীতে এবার আষাঢ় মাসের ‘উপহার’ এক কোটি টাকা

এবার আষাঢ়ে বৃষ্টির ভিন্ন রূপ দেখেছেন রাজশাহীর মানুষ। প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে ছাতা ছাড়া বের হওয়াই যায়নি। গত ৯ জুলাই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ডাকরা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

এবার আষাঢ় কী উপহার দিয়ে গেল—এ প্রশ্নে যে কেউ বলে উঠবেন, কেন, কদম ফুল। আর মাসজুড়ে বৃষ্টির ঘ্যানর ঘ্যানর। রাজশাহীতে ছাতা ছাড়া কোথাও বের হওয়া যায়নি। তবে হাওয়াটা ছিল বেশ শীতল, বাতাসটা নির্মল। গাছের পাতারা প্রতিদিনই বৃষ্টির ফোঁটায় ধুয়ে নিয়েছে গায়ের ময়লাধুলো। এতে সবুজ পাতারা আরও সবুজ হয়েছে। প্রাণপ্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে।

কিন্তু আষাঢ়ের এই ৩১ দিনের সরাসরি কোনো আর্থিক অবদানও কি আছে? রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব বলছে, হ্যাঁ। এবার আষাঢ় মাসে লাগাতার বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া শীতল ছিল। ফলে এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) ও বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবহার কম ছিল। এতে গত বছরের চেয়ে রাজশাহী শহরে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৮ টাকা মূল্যের বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে। যাকে কেউ কদম ফুলের সঙ্গে এবারের আষাঢ়ের বাড়তি উপহার বলতেই পারেন। কারণ, গত বছর আষাঢ়ে বৃষ্টি হয়েছিল মাত্র এক দিন। আর এবার হয়েছে সব দিন।

রাজশাহীতে নিয়মিত আবহাওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও নওগাঁর শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ। তাঁর হিসাবমতে, এবার আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এক দিনও ভারী বৃষ্টি হয়নি। গত বছর আষাঢ় মাসে মাত্র এক দিন বৃষ্টি হয়েছে। তার আগের বছর ২০২৩ সালে হয়েছে মাত্র তিন দিন। ২০২২ সালে হয়েছে চার দিন, ২০২১ সালে ছয় দিন এবং ২০২০ সালে হয়েছে পাঁচ দিন। তিনি ১৩ বছর ধরে আবহাওয়ার ডায়েরি লিখছেন। তার মধ্যে এ বছরের মতো বৃষ্টির চেহারা দেখেননি।

আরও পড়ুন

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছর আষাঢ়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আষাঢ় মাসজুড়েই এ রকম চড়া তাপ সইতে হয়েছে রাজশাহীর মানুষকে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আজিজুল হক জানিয়েছেন, মানুষের শরীরের ভেতরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৬ দশমিক ৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বাইরের তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি মানুষের কাছে অসহনীয় লাগে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর আষাঢ়ের ২৮ তারিখে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়েও কম। শুধু তা–ই নয়, মাসজুড়েই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ছিল কম।

গাছের পাতারা প্রতিদিনই বৃষ্টির ফোঁটায় ধুয়ে নিয়েছে গায়ের ময়লাধুলো। ৯ জুলাই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ডাকরা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলছেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্নœতাপমাত্রার ব্যবধান যত কম থাকবে, গরম তত কম লাগে। এ বছরের ২৫ আষাঢ় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিল ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি। এ রকম কম ব্যবধান থাকার কারণেই এবারের আষাঢ়ের তাপমাত্রা সহনীয় ছিল।

রাজশাহী শহর ও পবা উপজেলার কাটাখালী এলাকায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তার হিসাব থেকেই বিদ্যুৎ ব্যবহারের এই তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছর অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে ১২ কোটি ৩০ লাখ ২৪ ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছিল। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ছিল ৭ টাকা ০৪৫ পয়সা করে। মোট খরচ হয়েছিল ৮৬ কোটি ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৬৯ টাকা।

এবার ১৪৩২ বঙ্গাব্দের আষাঢ়ে ১২ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ছিল ৭ টাকা ০৪৫ পয়সা করে। মোট খরচ হয়েছে ৮৫ কোটি ৪৯ লাখ ১৬ হাজার ১৬০ টাকা। তাতে দেখা যাচ্ছে যে এ বছরের আষাঢ়ে মোট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৬ ইউনিট, টাকার অঙ্কে যার মূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৮ টাকা।

রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশের অন্য জেলাগুলোর চেয়ে রাজশাহী শহরে সবচেয়ে বেশি এসি ও ফ্যানের ব্যবহার হয়। এ জন্য আবহাওয়া শীতল থাকলে এসব তাপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ কমে যায়। এবার আষাঢ়ে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি ছিল, যে কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিমাণ চোখে পড়ার মতো হয়েছে। এটাকে ঘুরিয়ে বললে আষাঢ়ের উপহারও বলা যায়।

আরও পড়ুন