নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

মজিবর রহমান (৫১)
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ও তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের শিবগঞ্জ ফেরিঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে পুলিশ আটক করেছে।

নিহত ব্যক্তির নাম মজিবর রহমান (৫১)। তিনি দুর্গাপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিরিশিরি ইউনিয়নের নলজোড়া গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মজিবরের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মারামারি, সীমান্তে পাচার ব্যবসাসহ ১২টি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

এলাকার লোকজন ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে চোরাচালান ব্যবসা, আধিপত্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মজিবর রহমানের সঙ্গে কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আওয়াল এবং তাঁর ভাই মো. শামীম মিয়া ও মো. বদিউজ্জামানের মধ্যে বিরোধ চলছে। আওয়াল উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব।

রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে মজিবর রহমানের ভাতিজা খায়রুল ইসলাম সরকারি সুসং ডিগ্রি কলেজে ক্লাস করতে যান। এ সময় তাঁকে আবদুল আওয়ালের ছেলে মো. আবির মারধর করেন। কিছুক্ষণ পর খায়রুল তাঁর এলাকা শিবগঞ্জ ঘাটে এসে লোকজন নিয়ে গিয়ে আবিরকে মারধর করেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে বেলা ১১টার দিকে আবদুল আওয়ালের ছোট ভাই মো. শামীম মিয়া লোকজন নিয়ে এসে মজিবর রহমানের ওপর হামলা চালান। এ সময় মজিবরের একটি টিনের দোকান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিপক্ষের হামলায় মজিবর এবং তাঁর ছেলে কুল্লাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মো. রাজন ও মো. ছাব্বির, স্বজন ফারুক মিয়া, নাঈম মিয়াসহ অন্তত ছয়জন আহত হন।

পরে গুরুতর আহত মজিবর রহমানকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  মজিবরের ছেলে আহত ছাব্বিরের দাবি করে বলেন, ‘শামীম তাঁর দলবল নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা চালান। এ সময় বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়েন। আব্বাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শামীম ও তাঁর ভাইয়েরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব বিস্তার করেছেন। তাঁদের ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন না। আমরা প্রতিবাদ করায় আব্বাকে হত্যা করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রকিবুল হাসান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই প্রচুর রক্তক্ষরণে মজিবর রহমান মারা যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, ধারালো কোনো কিচুর আঘাতে তিনি নিহত হয়েছেন। গুলির চিহ্ন আছে কি না তা ময়নাতদন্ত হাতে পেলে স্পষ্ট হবে।

এ ব্যাপারে আবদুল আওয়াল ও তাঁর ভাই শামীম মিয়ার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা সুব্রত সাংমার (৪৭) ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্য করা হয়। ওই হত্যা মামলার আসামি বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল ও তাঁর ভাই মো. শামীম মিয়া।

আরও পড়ুন

নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে মজিবর রহমান নিহত হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে পুলিশ আটক করেছে। তাঁদের নাম মোকসেদুর রহমান ও আতাউর রহমান। তিনি শামীমের সমর্থক বলে জানা গেছে। মজিবরের নামে গত ১০ বছরে ১২টি মামলা রয়েছে। আর শামীমের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত খুন, মাদক, অস্ত্র, নাশকতা, সীমান্তে চোরাচালানসহ অন্তত ২৫টি এবং তাঁর বড় ভাই আবদুল আওয়ালের নামে ২৪টি মামলা রয়েছে।