পটুয়াখালীতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাড়িছাড়া

শনিবার সংঘর্ষের সময় পটুয়াখালী জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে সিঙ্গারা পয়েন্ট পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীতে বিএনপির সঙ্গে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় করা পৃথক তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে দলটির নেতা-কর্মীরা এখন বাড়িছাড়া। বিএনপির নেতারা বলছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানির জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বেশির ভাগ নেতা-কর্মী বাড়ি ছেড়েছেন।

পৃথক তিনটি মামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকারসহ ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা প্রায় ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলা পরিচালনার জন্য জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার বিকেলে জরুরি সভা করা হয়েছে। সভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আইনজীবী মজিবুর রহমানকে মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেনকে সদস্যসচিব করে ৫১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

জেলা বিএনপি নেতা স্নেহাংশু সরকার বলেন, ‘হামলা ও মামলার পর ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা তাঁদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি খুঁজছে। পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। রাস্তাঘাটে হামলা হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের পিটিআই সড়কে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রনি বিশ্বাসকে (৩৭) পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা শহরে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমাদের নামে মিথ্যা ও ভৌতিক মামলা করেছে। আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আইনের মাধ্যমেই আমরা এর মোকাবিলা করব।’

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার সকালে পটুয়াখালী শহরের বনানী মোড় এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে আয়োজন করা হয়। একই সময় পৌরসভা মোড়ে জেলা যুবলীগের পাল্টা শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। শনিবার রাতে প্রথম মামলাটি করেন জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক রায়হান হোসেন। এ মামলায় জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মনির মুন্সিকে প্রধান আসামি করে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

রোববার সকালে অপর মামলাটি করেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন। এ মামলায় জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

তৃতীয় মামলাটি করেন পটুয়াখালী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপুল হালদার । তিনি এ মামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকারকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করেন এবং আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, সাজানো ও গায়েবি মামলা বলে দাবি করেন মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আইনজীবী মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, মামলার আসামি কারা বাদী জানেন না। যুবলীগের মামলায় মো. লিটন নামে ছাত্রলীগের কর্মীকে ১৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের মামলায় আসামির তালিকায় একই নাম ১৪ নম্বর ও ১৬ নম্বর তালিকায় রয়েছে। আসলে সাজানো মামলা দিয়ে বিএনপিকে হয়রানি করার চেষ্টা চলছে।

জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচিতে হামলার পর মামলা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী বাহিনী মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করছে। এই অবস্থা এড়াতে নেতা-কর্মীরা এলাকা থেকে সরে গেছেন। যেহেতু মামলায় আসামি করা হয়েছে, তাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনের জন্যও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন বলেন, ‘হামলা চালিয়ে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করে উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমরা মনে করি, বিএনপির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আওয়ামী লীগের এটি একটি নীলনকশা। মিথ্যা মামলা দেওয়া বিএনপিকে দমন করার কৌশল।’

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পৃথক তিনটি মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার সকালে পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। অন্যদিকে ওই দিন সকালে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা শহরে শান্তি সমাবেশের ডাক দেন।

আরও পড়ুন

মিছিল নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এসব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিএনপির সমাবেশস্থলের দিকে এগোলে পথে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। উভয় পক্ষই লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সকাল ১০টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষের কারণে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে সিঙ্গারা পয়েন্ট পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি মোটরসাইকেলে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ তিনটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়।