এবার পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন সেই চা বিক্রেতা হারুন

চায়ের দোকানের একটি ড্রয়ারে কিছু বই নিয়ে পাঠাগারের কার্যক্রম শুরু করেছেন হারুন মিয়া। সম্প্রতি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের মধ্য বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চায়ের দোকান চালানোর পাশাপাশি রাত জেগে পড়াশোনা করে ২৪ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন। এ ছাড়া গ্রাহকদের সম্মাননা জানানো, প্রতিবছর চা দিবস পালন করা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে অর্ধেক দামে চা বিক্রির ঘোষণা দিয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পৌর শহরের মধ্য বাজার এলাকার চা বিক্রেতা হারুন মিয়া।

সেই হারুন মিয়া এবার স্বপ্ন দেখছেন নিজের উদ্যোগে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করার। উদ্দেশ্য মানুষের পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনা। হারুন মিয়ার উপলব্ধি মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে আসক্তির কারণে সব বয়সী মানুষ বই পড়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। এ বছরের ৭ মে থেকে হারুন মিয়া নিজের চায়ের দোকানের একটি ড্রয়ারে কিছু বই নিয়ে শুরু করেছেন তাঁর পাঠাগারের কার্যক্রম। নাম দিয়েছেন হারুন পাঠাগার। বর্তমানে তাঁর পাঠাগারে ১০০টি বই রয়েছে। চায়ের গ্রাহকেরা চা পান করতে করতে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন। আবার অনেকেই নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে নিজের বাড়িতে নিয়ে বই পড়ে আবার ফেরত দেন।

চা–দোকানি হারুন মিয়া
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পৌর শহরের সতিষা গ্রামে। ছয় ভাইবোনের সংসারে তিনি পঞ্চম। হারুনের বাবা আবদুল জব্বার পেশায় সবজি বিক্রেতা। সংসারের অভাবের কারণে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর পর স্কুল ছেড়ে চায়ের দোকানে যেতে হয় হারুনকে। চায়ের দোকান চালালেও পড়াশোনার প্রতি তাঁর ছিল অদম্য আগ্রহ। একপর্যায়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কুলে ভর্তি হন তিনি।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান চালিয়ে বাড়িতে গিয়ে হারুন রাত জেগে পড়াশোনা করেছেন। ২০২২ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। হারুনের এসএসসি পাসের খবর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল গৌরীপুরে গিয়ে হারুনকে শুভেচ্ছা জানান। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় হারুনের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়।

আরও পড়ুন

হারুন মিয়া বলেন, এসএসসি পাসের পর তিনি বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছেন। আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। পাঠাগারের ভাবনা নিয়ে হারুন বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখেছি স্কুল–কলেজপড়ুয়া ছেলে–মেয়েরাসহ প্রায় সব বয়সী মানুষ বই পড়ে সময় কাটাতেন। এখন মোবাইল ফোনে আসক্তির কারণে কেউ আর বই পড়ে না। মানুষের পাঠাভ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে। সেই চিন্তা থেকেই আমি একটি পাঠাগার চালু করেছি। এতে মানুষের পাঠাভ্যাস ফিরে আসতে পারে।’

আরও পড়ুন

অন্যের একটি ভাতের হোটেলের বারান্দায় হারুনের চায়ের দোকান। সে দোকানের একটু জায়গায় একটি টেবিলে পাঠকদের বসতে দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময় নিজের টাকায় কেনা ১০০টি বই রয়েছে তাঁর। হারুনের স্বপ্ন, একদিন পাঠাগারটি অনেক বড় হবে। পাঠাগারের জন্য আলাদা একটি ঘর করা হবে। পাঠকদের জন্য করা হবে চেয়ার টেবিল।

সম্প্রতি হারুনের পাঠাগারে গিয়ে দেখা যায়, বেশ আগ্রহ নিয়ে সংবাদপত্র ও বই পড়ছেন কয়েকজন পাঠক। পাঠকেরা জানান, হারুনের এ উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী। গৌরীপুর পাবলিক কলেজের শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘চা দোকান চালানোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এবং পাঠাগার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হারুন আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁর সব চেষ্টা সফল হোক।’