সংগ্রাম করে বাঁচা কিশোরটির মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউ

মোক্তার হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

মোক্তার হোসেনের বয়স ১৬ বছর। এই জীবনটুকু সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়েছে তাকে। মা–বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর থেকে নানার সঙ্গে থাকত সে। গত শনিবার রাতে পদ্মা নদীতে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় সে প্রাণ হারায়। সে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মোল্যাকান্দি গ্রামের বাচ্চু ছৈয়ালের ছেলে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার মোল্যাকান্দি গ্রামটি পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা। ওই গ্রামের বাচ্চু ছৈয়াল ও হাসিনা দম্পতির ছেলে মোক্তার হোসেন। তার ছোট বয়সেই মা–বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন থেকে সে নানা আবদুল জলিল মোল্যার কাছে থাকত। অভাবের কারণে শিশু বয়সেই তাকে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে শ্রমিকের কাজ শুরু করতে হয়েছে। এর দুই বছর পর ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর কাজ শুরু করে সে। মৃত্যুর আগপর্যন্ত সে এই পেশাতেই ছিল।

শনিবার সন্ধ্যার দিকে প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম যাত্রী আনার জন্য স্পিডবোট নিয়ে মোক্তারকে সঙ্গে করে কাঁচিকাটা যাচ্ছিল। রাত সাড়ে আটটার দিকে মনাই হাওলাদারকান্দি ঘাটের কাছাকাছি নদীতে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি স্পিডবোটের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়। তখন মোক্তার আহত হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন

গতকাল রোববার চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যার দিকে মোক্তারের লাশ নানার বাড়িতে আনা হয়। স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্না থামাতে পারছিলেন না। তার এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউ।

নিহত মোক্তারের মামা তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোক্তারের জীবনটা অনেক কষ্টের ছিল। নিজেই কাজ করে জীবন চালাত। টাকার অভাবে পড়ালেখা করা হয়নি। মা–বাবা থাকতেও নেই। মোক্তারের এমন মৃত্যু আমরা মানতে পারছি না।’

শনিবার পদ্মা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত কাঁচিকাটা ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই ইউপি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারাপারের জন্য ভেদরগঞ্জ ইউএনও রাজিবুল ইসলাম দুটি স্পিডবোট ভাড়া করেন। তবে ওই নৌপথে স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি ছিল না। রাতে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১১ জন আহত হন।

আরও পড়ুন

ভেদরগঞ্জের ইউএনও রাজিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য স্পিডবোট দুটি ভাড়া করা হয়েছিল। ওই স্পিডবোট দুটির দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। তাঁরা ওই কিশোরের স্বজনদের পাশে থাকবেন।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি। নিহত কিশোরের পরিবার কোনো মামলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।