১৪টি শকুনের মৃত্যু: ঘটনাস্থল থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করেছে গবেষক দল

শকুনসহ অন্য প্রাণীর মৃত্যুর স্থান ঘুরে দেখছে গবেষক দল। শুক্রবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাপন, বুড়িকোনা ও রসুলপুরের মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারে মহাবিপন্ন শকুনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধান করতে মাঠে নেমেছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার গবেষক ও কর্মকর্তারা। আজ শুক্রবার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাপন মাঠের বিভিন্ন স্থান ঘুরে তাঁরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

এদিকে অবৈধভাবে বাংলা শকুন ও শিয়াল হত্যার বিষয়ে বন বিভাগের বর্ষিজোড়া বিট কর্মকর্তা আবু নঈম মো. নুরুন্নবী বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় গতকাল বৃহস্পতিবার একটি এজাহার জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তারা (বন বিভাগ) অভিযোগ করেছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে।

আরও পড়ুন

এজাহারে বলা হয়েছে, গত বুধবার রাতে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোটের (আইইউসিএন) মাধ্যমে জানতে পারেন বড়কাপন মাঠে বেশ কয়েকটি বাংলা শকুন মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। পরদিন সকাল আটটার দিকে আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রতিনিধি মাহী ওয়াসিমসহ গবেষক দলটি ঘটনাস্থল থেকে ১০টি মৃত শকুন উদ্ধার করেন। শকুনের ময়নাতদন্তের জন্য প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যান। প্রাণিসম্পদ অফিসে প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় সিলেটে পাঠানো হয়। ওই দিন (গতকাল) পরবর্তী সময়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি দল পুনরায় ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে তল্লাশি করে আরও তিনটি মৃত বাংলা শকুন, শিয়ালের মাথার খুলি, মৃত শিয়াল, চার-পাঁচটি মৃত কুকুর ও দু-তিনটি কীটনাশকের খালি প্লাস্টিকের কৌটা পাওয়া যায়। এ সময় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলাপ করে তাঁরা জানতে পারেন, বড়কাপন গ্রামের মো. রোকন ও কচনু মিয়ার একটি পোষা ছাগলকে শিয়াল কামড়ে মেরে ফেলে। এতে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে মৃত ছাগলে বিষ মিশিয়ে ঘটনাস্থলে রেখে দেন। যা খেয়ে শকুন, কুকুর ও শিয়াল মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আরও পড়ুন

আইইউসিএন, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শকুনের শরীরে আইইউসিএনের স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানো ছিল। আইইউসিএনের গবেষক দল প্রতিদিন শকুনটির চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করত। কিন্তু কয়েক দিন থেকে শকুনটির অবস্থান একই জায়গায় ছিল। কোনো সিগন্যাল মিলছিল না। এই অনড় থাকার কারণটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে শকুনের মৃত্যুর বিষয়টি ধরা পড়ে। আইইউসিএন বুধবার শকুনটির অবস্থান চিহ্নিত করে। সেই অনুযায়ী গতকাল বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং আইইউসিএনের গবেষক দলটি চিহ্নিত স্থান বড়কাপন মাঠ থেকে শকুনের ১০টি মৃতদেহ ও ১টি শকুনের দেহাবশেষ উদ্ধার করে। পরে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ওই দিন দুপুরে একই মাঠ থেকে আরও তিনটি মৃত শকুন উদ্ধার করে। এই মাঠে ১৪টি শকুন ছাড়াও মৃত কুকুর ও কুকুর-শিয়ালের হাড়গোড় পাওয়া যায়।

এদিকে শকুন ও অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত জানতে আজ সকালে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং আইইউসিএনের কর্মকর্তা ও গবেষক দল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে। এই দলে ছিলেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী, পাখিবিদ আল্লামা শিবলি সাদিক, জাপানের টোকিও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বন্য প্রাণীবিষয়ক অধ্যাপক রাই সুজুকি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব এবং রোগ প্রতিরোধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ মৌলভীবাজারের ভেটেরিনারি সার্জন নিরোদ চন্দ্র সরকার, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শাহীনুল হক, আইইউসিএন বাংলাদেশের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম প্রমুখ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গতকাল রাতেই মৃত কুকুর-শিয়াল মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে, যাতে আর কোনো প্রাণী মারা না যায়। মানুষকে সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার মসজিদে ইমামদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন খুতবার সময় বিষ না দিতে লোকজনকে বলেন। এ ছাড়া সচেতনতা বাড়াতে এলাকায় মাইকিং করা হবে।