প্রখর রোদ, তপ্ত মাটি আর ভ্যাপসা গরমেও গান গেয়ে ধান কাটছেন কৃষিশ্রমিকেরা

গাইবান্ধায় গান গেয়ে ধান কাটছেন কৃষক ও কৃষিশ্রমিকেরা। শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা জেলায় আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাথার ওপরে প্রখর রোদ। নিচে তপ্ত মাটি। ভ্যাপসা গরমে গা থেকে পানি ঝরছে। এর মধ্যেও ক্লান্তি নেই গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায় কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের। সোনালি ধানের সুগন্ধে তাঁদের কণ্ঠে বাজছিল গানের সুর। দল বেঁধে গান গেয়ে ধান কাটেন তাঁরা।

বেলা তিনটার দিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে ছয় থেকে সাতজন কৃষক ও কৃষিশ্রমিক ধান কাটছেন। তাঁরা কখনো গান ধরছেন, ‘ও ধান কাটো রে মাতাল মাতাত দিয়া...’, কখনো গাইছেন ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাঁকাও গাড়ি মোর চিলমারী বন্দরে...’। ‘তোর বিরহে ঘুম আসে না মোর দুটি চোখে...’, ‘আহা কোন পরানে পারলিরে সরল মনে ব্যথা দিতে...’র মতো গানও শোনা গেল তাঁদের কণ্ঠে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, এ ধরনের জনপ্রিয় গানের তালে তালে আনন্দ করে ধান কাটার প্রচলন গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে ভাওয়াইয়া ও প্রচলিত নানা ধরনের গান রয়েছে। একজন গাইছেন, অন্যরা তাল মেলাচ্ছেন। গানের তালে সবাই একযোগে ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন।

কৃষকেরা জানালেন, এখন যে গরম ও রোদ তাতে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। তার ওপর খোলা মাঠে ধান কাটা। তাই সবাই গান গেয়ে ধান কাটেন। আনন্দের মধ্যে কাজ করলে রোদ গরম মনে হয় না। তাই গান গাওয়া।

বাড়ইপাড়া গ্রামের ভুট্টু মিয়া বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমিতে ধান পেকে আছে। এখন আবহাওয়া ভালো। তাই তাড়াতাড়ি কেটে নিচ্ছি। আনন্দের মাঝে থাকলে কাজে কষ্ট মনে হয় না। তাই সবাই গান গায়।’ একই গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গান গেয়ে ধান কাটার দৃশ্য ছোটবেলা থেকেই দেখছি। এটা এই অঞ্চলের রীতি হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন

একই গ্রামের আদর্শ কৃষক ওসমান গনি জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার গাইবান্ধার কৃষকেরা বেশি খুশি। গান গেয়ে ধান কাটাই তা প্রমাণ করে। পার্শ্ববর্তী আনালেরতারি গ্রামের কৃষক আজিমুদ্দিন, সিদ্দিক হোসেন, জুয়েল মিয়া, আসাদুল ইসলামও একই ধরনের মন্তব্য করেন।

গানের তালে সবাই একযোগে ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বাড়ইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ধান কাটা নিয়ে কৃষকেরা যেমন ব্যস্ত, তেমনি আনন্দও লক্ষ করা যাচ্ছে। কারণ, বোরো ধানই তাঁদের প্রধান অর্থকরী ফসল। এই ধান দিয়েই তাঁরা সারা বছর খাওয়া ও সাংসারিক খরচ মিটিয়ে থাকেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চাষ হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চাল আকারে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৮১৯ মেট্রিক টন। বোরো কাটার উপযুক্ত সময় এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আনন্দ বেশি। তাই অনেক এলাকায় গান গেয়ে ধান কাটার কথা শোনা যাচ্ছে।

খোরশেদ আলম বলেন, এ পর্যন্ত শতকরা ৩৫ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। জেলায় ১৫-১৬টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েও ধান কাটা চলছে। দ্রুত ধান কর্তনে কৃষকদের পরামর্শ দিতে মাঠকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশা করা যায়, আবহাওয়া ভালো থাকলে এ মাসেই ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন