মুন্সিগঞ্জে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবিতে এখনো দুজন নিখোঁজ
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো দুজন নিখোঁজ। তাঁদের সন্ধানে আজ রোববার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে হাসাইলচর এলাকায় নদীতে অভিযান চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশের সদস্যরা। এর আগে একই দুর্ঘটনায় দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন ও উদ্ধারকারীরা।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) ও রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকার মাহফুজুর রহমান (৩৫)।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় হাসাইলচর থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হাসাইল ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। তখন দক্ষিণ দশআনি নামের একটি বাল্কহেড চাঁদপুর থেকে বালু আনতে ওই নৌপথ দিয়ে পদ্মা নদীর দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বাল্কহেডটি ট্রলারের ওপর উঠে যায়। এ ঘটনার পর সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকার মো. ফারুকের মেয়ে ফাইজা আক্তার (৬) এবং মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মান্দ্রা এলাকার নজরুল ব্যাপারীর মেয়ে শিফারকে (১৫) লাশ উদ্ধার করেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক ও উদ্ধার অভিযানের কমান্ডার ওবায়দুল করিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। রাতে দুই ঘণ্টার মতো আমাদের ডুবুরি দল কাজ করেছে। প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশার কারণে রাতে পুরো সময়টা অভিযান চালানো যায়নি। আজ সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে আবার আমাদের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। ট্রলার থেকে একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো নিখোঁজ কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।’ উদ্ধার করতে মাওয়া থেকে একটি ক্রেনবোর্ড নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটির চালক মো. আল আমিন বলেন, ‘দূর থেকে বাল্কহেডটি দেখে সেটির চালককে লাইট জ্বালিয়ে ইশারা দিই। তারপরও সোজা আমাদের ট্রলারে উঠিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ট্রলারটি ডুবে যায়। শুনেছি দুজন মারা গেছেন। অনেকেই আহত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, বাল্কহেডের বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ জন্য দিনরাত অবাধে পদ্মার শাখা নদী দিয়ে বাল্কহেড চলাচল করে। পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্বল নজরদারির কারণে বালু ব্যবসায়ী, বাল্কহেডের মালিক ও চালকেরা রাতের বেলায় বাল্কহেড চালাচ্ছেন। এতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত বছর একই জায়গায় বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকা ডুবে লালচান মিয়া (৩৮) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়। গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জের সীমানাঘেঁষা সোনারগাঁয়ের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় গজারিয়া উপজেলা থেকে আসা একটি পিকনিকের ট্রলার ডুবে যায়। এ ঘটনায় নারী–শিশুসহ ৬ জন মারা যান। চলতি বছরের ৫ আগস্ট পদ্মার আরেকটি শাখা নদীতে লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের আরও একটি ট্রলার ডুবে নারী–শিশুসহ ১০ জন মারা যান। তাঁরা সবাই সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।