সরকারি হাসপাতালে অনিয়ম-অবহেলার প্রতিবাদে রাবি অধ্যাপকের অনশন

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় অনিয়ম, অবহেলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের অনশন। সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা চত্বরে
ছবি: শফিকুল ইসলাম

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় অনিয়ম, অবহেলা ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে অশোভন আচরণের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক অধ্যাপক অনশনে বসেছেন। আজ সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে তিনি এ অনশন শুরু করেন। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

অনশন করা ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। তাঁর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনে বসেন অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক কর্মসূচিতে সংহতি জানাবেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, সারা দেশে সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা নিয়ে দিনের পর দিন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। সেখান থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তাঁরা। নানা হয়রানি ও পদে পদে ভোগান্তি আছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে চিকিৎসার ব্যয় বেড়ে গেছে। চিকিৎসাসেবায় দেশের মানুষকে প্রতি ১০০ টাকায় ৬৮ টাকা নিজের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয়। এটা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি।

অধ্যাপক ফরিদ অভিযোগ করে বলেন, একটি দেশে যখন বাধ্য হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে যান মানুষ, তখন নানা ধরনের অবহেলা, অনিয়ম প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা দলবল নিয়ে হামলা করছেন। এ ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর শিকার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের সহপাঠী সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। কিন্তু তাঁরা যেভাবে অস্ত্রপাতি নিয়ে হামলা করেছেন, কোনো পেশার মানুষ এটা করতে পারেন না। হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

আরও পড়ুন

ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন। অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এভাবে নৈরাজ্য, অব্যবস্থাপনা চলতে পারে না। অবশ্যই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের এদিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য তিনি প্রতিবাদ হিসেবে অনশন করছেন।

১৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এস জে এম শাহরিয়ার শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। এরপর দ্রুত তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন

রাবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রায় ৪০ মিনিট চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখা হয়। অবহেলায় সহপাঠীকে মারা যেতে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন তাঁরা। ওই সময় হাসপাতালের ইনটার্ন চিকিৎসক ও আনসার সদস্যরা তাঁদের মারধর করেন।

এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের প্রতিনিধি রাখা হয়। পাঁচ সদস্যের অন্য কমিটিতে শুধু হাসপাতালের লোকজন আছেন। সংঘর্ষের ঘটনা ও শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া হলের বারান্দা থেকে শাহরিয়ার কীভাবে পড়ে গেলেন, তা তদন্তে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি করেছে হল প্রশাসন। তবে তদন্ত কমিটির কোনো প্রতিবেদন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এ ঘটনায় হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নগরের রাজপাড়া থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ করেছে। সেগুলো মামলা হিসেবে নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

আরও পড়ুন